চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পরিবেশ আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের পুরনো ভবনটি দ্রুত মেরামত ও সংস্কারের প্রয়োজন। হাইভোল্টেজ আসামিদের বিচারের জন্য বর্তমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পরিবেশ উপযোগী নয়। এখানে তৈরি করা টিনশেড ঘরে বিচার করা সমীচীন হবে না। বিদ্যমান পরিবেশে বিচার কার্যক্রম শুরু হলে এখানে বিদেশিরা পর্যবেক্ষণের জন্য এলে অবাক হবেন। তাই এখানকার পরিবেশ উন্নয়নে সংস্কার প্রয়োজন।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের পর আসামিদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় আদেশের আবেদন পেশ করব।
চিফ প্রসিকিউটর আরও জানান, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বিগত সরকারের নির্দেশে পরিচালিত গণহত্যার তথ্য-উপাত্ত চেয়ে সব গণমাধ্যম, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, সিভিল সার্জন, প্রত্যেক জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারকে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, গণহত্যার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে আমরা হাসপাতালগুলো পরিদর্শন করেছি। এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। জুলাই-আগস্ট গণহত্যার তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করতে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আহ্বান জানান চিফ প্রসিকিউটর।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন কবরস্থান পরিচালনাকারীদের কাছেও তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। আন্দোলনের সবচেয়ে বড় সাক্ষী হচ্ছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। এ বিচারের সবচেয়ে বড় সাক্ষী তারা। আমরা এ আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে মতবিনিময় করার উদ্যোগ নিয়েছি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে ৭ সেপ্টেম্বর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ছাড়াও ট্রাইব্যুনালে আরও চার আইনজীবীকে প্রসিকিউটর পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন- মো. মিজানুল ইসলাম, গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বিএম সুলতান মাহমুদ এবং আব্দুল্লাহ আল নোমান।
এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম অ্যাটর্নি জেনারেলের পদমর্যাদা, বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। বাকি চার প্রসিকিউটরের মধ্যে মো. মিজানুল ইসলাম অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম ও বিএম সুলতান মাহমুদ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও আব্দুল্লাহ আল নোমান সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের সমমর্যাদা পাবেন। দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট, ১৯৭৩-এর সেকশন ৭ অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলা পরিচালনার জন্য পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ নিয়োগ কার্যকর থাকবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে সংঘটিত অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট দেশ থেকে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে।
বৈষম্যবিরোধী টানা ৩৬ দিনের আন্দোলন নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় ক্যাডারদের হামলায় সরকারি হিসেবেই আট শতাধিক নিহত হয়েছেন। এ সংখ্যা আরও বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। গুলিতে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন বহু মানুষ। এখনো চিকিৎসাধীন কয়েক হাজার মানুষ। জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হবে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন গঠন করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য এ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল। স্কাইপি কেলেঙ্কারি, সাক্ষী গুম ও ন্যায়বিচার বঞ্চিত হওয়ার নানা অভিযোগ সত্ত্বেও এখানে প্রায় অর্ধশতাধিক মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর আনা আপিল নিষ্পত্তি শেষে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এখন এ ট্রাইব্যুনালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জুলাই আগস্ট গণহত্যার বিচার হবে।
মন্তব্য করুন