কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৩ পিএম
আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

দু’বার বঞ্চিত হন বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন প্রধান

শপথ পড়ছেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত
শপথ পড়ছেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত

বিচার বিভাগ সংস্কারের দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান। স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) তাকে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব দিয়েছেন।

শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান ছিলেন বিচার বিভাগের এক সাহসী সৈনিক। ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেনের সেনা সমর্থক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিচার বিভাগ যখন পদলেহনে ব্যস্ত, তখন সব বেড়াজাল ভেঙে এক সাহসী কণ্ঠে পরিণত হন এই বিচারপতি। তখনকার সরকারের মাইনাস টু ফর্মুলা থেকে দুই নেত্রীকে রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম। দুই নেত্রীকে জামিনও দিয়েছিলেন এই বিচারপতি। অথচ বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়াসহ দুই দফায় প্রধান বিচারপতি হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার বঞ্চনা সহ্য করতে হয় এই বিচারপতিকে।

জানা যায়, ওয়ান ইলেভেনে একে একে রাজনীতিবিদরা যখন জেলবন্দি হতে থাকেন তখন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়ে তিনি সাহসী ভূমিকা দেখান। ২০০৭ সালের ১ অক্টোবরে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান ও বিচারপতি যুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধানী হাইকোর্ট বেঞ্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জামিন আদেশ জারি করেন। এরপর ২২ নভেম্বর ২০০৭ সালে একই বেঞ্চ দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পদের বিবরণী চাওয়াকে অবৈধ ঘোষণা করেন।

২৭ জানুয়ারি ২০০৮ সালে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান ও বিচারপতি শহীদুল ইসলাম তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে কেন স্থগিত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশ দেওয়া হবে তা জানতে চেয়ে একটি আদেশ জারি করেন। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি এবং বিচারপতি শহিদুল ইসলাম শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আজম জে চৌধুরীর করা মামলার কার্যক্রমকে অবৈধ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে আজম জে চৌধুরীর করা চাঁদাবাজির মামলায় শেখ হাসিনাকেও এই বেঞ্চ জামিন দেন। ওয়ান ইলেভেনের সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক আদেশ দিতে থাকায় একপর্যায়ে ১৭ মার্চ ২০০৮ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. রুহুল আমিন তার বিচারিক ক্ষমতা থেকে কেড়ে নেন।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগ করেন। ২০১০ সালে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত করা হয়েছিল যদিও শাহ আবু নাঈম ছিলেন আপিল বিভাগের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ বিচারক এবং প্রধান বিচারপতি হওয়ার জন্য পরবর্তী সারিতে ছিলেন। এরপর দ্বিতীয় দফায়ও জ্যেষ্ঠতার লঙ্ঘন করে ২০১১ সালে আওয়ামী সরকারের অনুগত বিচারক মোজাম্মেল হোসেনকে দেশের ২০তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। দুবার পদোন্নতি বঞ্চিত করার কষ্টে ২০১১ সালের ১১ মে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোহাম্মদ মমিনুর রহমান তার অবসরে যাওয়ার মাত্র কয়েক মাস আগে পদত্যাগ করেন। বিচার বিভাগের একজন সৎ, মেধাবী ও সাহসী বিচারপতির প্রধান বিচারপতি হওয়ার স্বপ্ন বিনষ্ট হয়ে যায় বিগত স্বৈরশাসকের রাজনৈতিক নোংরামি ও স্বৈরাচারী আচরণের কারণে।

বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানের জন্ম গাজীপুরে। তিনি ফকির আব্দুল মান্নান শাহের ছেলে। তিনি ১৯৬৫ এবং ১৯৬৬ সালে পদার্থবিজ্ঞানে থেকে স্নাতক এবং স্নাতক পড়াশোনা শেষ করেন। এ ছাড়া তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৯৭২ সালে শাহ আবু নাঈম ঢাকা জেলা জজ আদালতে আইন প্র্যাকটিস শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হন। ১৯৮০ সালে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী হন। ১৯৯৬ সালে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ২০০৯ সালে তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ গ্রেপ্তার

বড় জয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শুরু মার্তিনেজের ভিলার

শিক্ষায় ৩১ বছরের বৈষম্যের অবসান চান মাউশির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

১২ জেলারসহ ৩৪ কারা কর্মকর্তাকে বদলি

ডিএমপির ৮ কর্মকর্তাকে বদলি

মাজার ভাঙার প্রতিবাদে হরিরামপুরে সমাবেশ

ভারতবিরোধী পোস্ট শেয়ার করায় বিএনপি নেতার ভিসা বাতিল

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান মো. শাহজাহানের

সাড়ে ১০ কেজি স্বর্ণালংকারসহ মিয়ানমারের ২ নাগরিক আটক

অপহৃত ইউপি চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করল সেনাবাহিনী

১০

আবাসিক হলের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঢাবি উপাচার্যের মতবিনিময়

১১

বরিশাল মেট্রোপলিটনে চার থানায় নতুন ওসির যোগদান

১২

পাবনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক অবরোধ / পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

১৩

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু

১৪

‘১০ হাজার বিএনপির নেতাকর্মীকে খুন করেছে আ.লীগ’

১৫

কারাগার থেকে পালানো যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার

১৬

অনিয়ম, জুলুম ও দুর্নীতির বিচারে বাকৃবিতে গণতদন্ত কমিশন গঠন

১৭

জানা গেল কর্মস্থলে অনুপস্থিত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা

১৮

গাজীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রধান শিক্ষকসহ নিহত ২

১৯

হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র গ্রেপ্তার

২০
X