ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কিকে ১১ বছর আগে আজকের দিনে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যার সাড়ে পাঁচ বছর পরে ২০১৮ সালে এ মামলায় অভিযুক্ত ১৮ আসামির বিচার শুরু হয়। তবে আলোচিত এ হত্যা মামলাটির বিচার কার্যক্রম শেষ হয়নি। মামলায় এ পর্যন্ত ৭৫ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র সাতজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এতে সাক্ষ্যগ্রহণে আটকে রয়েছে বিচার কাজ। কবে নাগাদ বিচার কার্যক্রম শেষ হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। তবে রাষ্ট্রপক্ষের প্রত্যাশা চলতি বছরে এ মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ করা হবে।
বর্তমানে মামলাটি ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এ বিচারাধীন রয়েছে। এ মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার ৫ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে চলছিল। তবে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০২২ সালের ২১ মার্চ ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এ পাঠানো হয়। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর এ মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।
এ মামলার ১৮ আসামি হলেন- সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব, সোহেল মাহমুদ ওরফে সোহেল ভূঁইয়া, চুন্নু মিয়া, আরিফ ওরফে আরিফ হোসেন, সাহিদুল ইসলাম, ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, জাহাঙ্গীর মণ্ডল, ফাহিমা ইসলাম লোপা, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, শরীফ উদ্দিন চৌধুরী ওরফে পাপ্পু, তুহিন রহমান ফাহিম, সৈয়দ মুজতবা আলী প্রকাশ রুমী, মোহাম্মদ রাশেদ মাহমুদ ওরফে আলী হোসেন রাশেদ ওরফে মাহমুদ, সাইদুল ইসলাম ওরফে নুরুজ্জামান, সুজন হাওলাদার, ডা. দেওয়ান মো. ফরিউদ্দৌলা ওরফে পাপ্পু ও মামুন উর রশীদ। তাদের মধ্যে সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, ফাহিমা ইসলাম লোপা, শরীফ উদ্দিন চৌধুরী ওরফে পাপ্পু ও সৈয়দ মুজতবা আলী প্রকাশ রুমী পলাতক রয়েছেন। অপর ১৪ আসামি জামিনে রয়েছে।
২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে গুলশানে শপার্স ওয়ার্ল্ড নামে একটি বিপণিবিতানের সামনে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই বিপণিবিতানের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওচিত্র দেখে মিল্কির একসময়ের সহযোগী যুবলীগের আরেক নেতা জাহিদ সিদ্দিকী তারেকসহ ভাড়াটে খুনিরা তাকে হত্যা করে বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। ওই ঘটনায় মিল্কির ছোট ভাই রাশেদুল হক খান বাদী হয়ে গুলশান থানায় এজাহারনামীয় ১১ জন এবং অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১ এর সহকারী পরিচালক কাজেমুর রশিদ আদালতে ১১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে মূল আসামিদের নাম চার্জশিটে উল্লেখ না করার অভিযোগে ২০১৪ সালের ৯ জুন মামলার বাদী ও নিহত মিল্কির ভাই রাশেদ হক খান মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে দায়িত্ব দেয়ার আবেদন করেন। আদালত ২০১৪ সালের ১৭ জুন আবেদন মঞ্জুর করে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার (সিআইডি) উত্তম কুমার বিশ্বাস অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। আগের চার্জশিটভুক্ত ১১ আসামির সঙ্গে আরও সাতজনকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন, সেইসঙ্গে নয়জনকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করেন। মামলায় সাক্ষী করা হয় ৭৫ জনকে। ২০১৬ সালের ১৪ মে ঢাকার চী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলার চার্জশিট আমলে নেন। ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার ৫ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত ১৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাদিয়া আফরিন শিল্পী কালবেলাকে বলেন, এ মামলাটির বিচার শেষ করতে রাষ্ট্রপক্ষ আন্তরিকতার সঙ্গে সহযোগিতা করে আসছে। আমরা সাক্ষীদের আদালতে হাজিরের চেষ্টা করছি। কয়েকজন এসে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আশা করছি, চলিত বছরে মামলাটির বিচার কার্যক্রম শেষ করতে পারবো।
আসামি জাহাঙ্গীরের আইনজীবী নূর ইসলাম খান কালবেলাকে বলেন, এ মামলায় আসামি সাখাওয়াতের ড্রাইভার ছিলেন জাহাঙ্গীর। এটায় তার দোষ। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ নেই। সে কোনভাবেই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। সে অত্যন্ত গরিব মানুষ। এ মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষে হলে সে সে খালাস পাবে।
মন্তব্য করুন