ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও তার পরিবারের ১৯টি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করেছেন আদালত। এর মধ্যে ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৪৬ হাজার ৫১৭টি শেয়ার রয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ঢাকার ৯ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। এ ছাড়া স্থাবর সম্পদ হিসেবে টঙ্গী ও গাজীপুরে স্থাপনাসহ ১৩৭ দশমিক ২৮ শতাংশ জমি, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৩টি কার পার্কিংসহ ৮০৭০ স্কয়ার ফিট কমার্শিয়াল স্পেস জব্দ করা হয়েছে।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর ও কোর্ট ইন্সপেক্টর আমির হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিন দুদকের উপপরিচালক (টিম লিডার) আনোয়ার হোসেন কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ ও স্থাবর সম্পত্তি জব্দের আবেদন করেন। এসময় দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন। এর আগে দুই দফায় মতিউর পরিবারের ৮টি ফ্ল্যাট ও ৩৩ একক সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১১৬ টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও শেয়ার বাজারে থাকা ২৩টি বিও অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
এর আগে গত ১১ জুলাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও তার পরিবারের ১১৬টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ এবং ২৩ একর জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত। স্থাবর সম্পত্তি ছাড়াও শেয়ারবাজারে মতিউর, তার দুই স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ের ২৩টি বিও অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
জব্দ হওয়া সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে সাভারে মতিউরের নামে ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশ, তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে ১৪ শতাংশ, ভালুকায় ছেলে অর্ণবের নামে ১০৪ শতাংশ, ভাই এ এম কাইউম হাওলাদারের মালিকানাধীন গ্লোবাল সুজের ৯৫৮ শতাংশ জমি, গাজীপুরে মতিউর, ফারজানা, অর্ণব এবং মনোয়ার ও আপন ভুবন লিমিটেডের নামে ৮৭৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ জমি, নরসিংদীর শিবপুরে লায়লার ৩৮ শতাংশ, ছেলে অর্ণবের ১২৬ শতাংশ, মেয়ে ফারজানার ৭২ শতাংশ এবং নাটোরের সিংড়ায় লায়লা কানিজের নামে ১৬৬ শতাংশ জমি। এ ছাড়া ঢাকার মিরপুরে লায়লা কানিজের নামে থাকা চারটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে দুই দফায় আটটি ফ্ল্যাট ও ৩৩ একক সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে।
অন্যদিকে মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ১১৬টি ব্যাংক হিসাবের ১৩ কোটি ৪৪ লাখ ৩৬ হাজার ৪৭১ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে মতিউর ছাড়া তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ, ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণব, মহিউদ্দিন মোল্লা, ফারজানা রহমান ইস্পিতা, মাহফুজা ইউনুস, মো. বজলুর, তোফাজ্জল হোসেন, ফরহাদ আহমেদ, তাছাদ্দিক আহমেদ ফারাবি, দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলী, একেএম বখতিয়ার আলম, শরিফ আহসান, মো. শফিকুল ইসলাম, এম এ কাইয়ুম হাওলাদার, হাওয়ানুর বেগম, রুমা কুমকুম, আবিদা সায়মা মাহমুদা, কাজী সাইফুর রহমান ও আইনুল কবিরের ব্যাংক হিসাব রয়েছে।
দুদকের উপপরিচালক (টিম লিডার) আনোয়ার হোসেন ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ, ফ্ল্যাট ও স্থাবর সম্পত্তি জব্দের জন্য আদালতে আবেদন করেন। এ সময় দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত এই আদেশ দেন।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, মতিউর রহমান দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে নিজ নামে বা অন্যান্য ব্যক্তির নামে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ হুন্ডি ও আন্ডারইনভয়েসিং/ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার করে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে। অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যাচ্ছে, মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা তাদের মালিকানাধীন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন, যা করতে পারলে অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় মামলা দায়ের, আদালতে চার্জশিট দাখিল, আদালত কর্তৃক বিচার শেষে সাজার অংশ হিসেবে অপরাধলব্ধ আয় হতে অর্জিত সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্তকরণসহ সব উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে। তাই অনুসন্ধান শেষে মামলা দায়ের ও তদন্ত সম্পন্ন করে আদালতে চার্জশিট দাখিলের পর আদালত কর্তৃক বিচার শেষে সরকারের অনুকূলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের সুবিধার্থে সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে এসব স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও অস্থাবর সম্পত্তি অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
এর আগে গত ৪ জুলাই মতিউর রহমানের পরিবারের চারটি ফ্ল্যাট ও ১০ একর জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত। এর মধ্যে মতিউরের স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে বসুন্ধরায় তিনটি ফ্ল্যাট ও দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলীর নামে জিগাতলায় একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। জব্দ হওয়া সম্পত্তির মধ্যে বরিশালের মুলাদী উপজেলায় মতিউরের নামে ১১৪ শতাংশ জমি, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় মরজাল ইউনিয়নের মরজাল মৌজায় তার স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে ৫২২ শতাংশ জমি, ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে ২৭৫ শতাংশ জমি রয়েছে। এ ছাড়া মেয়ে ফারজানা রহমান ইস্পিতার নামে বসুন্ধরায় পাঁচ কাঠা প্লট এবং শাম্মী আখতার শিভলীর নামেও পাঁচ কাঠা প্লট রয়েছে। এ ছাড়া গত ২৬ জুন মতিউর রহমান, স্ত্রী লায়লা কানিজ ও পুত্র আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের বিদেশে গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। পরে ৩০ জুন লায়লা কানিজ বিদেশযাত্রার নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে আবেদন করেন। এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ২৭ জুলাই দিন ধার্য রয়েছে।
মন্তব্য করুন