সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায়ের মূল অংশ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় প্রকাশ করেন।
রায়ে বলা হয়েছে, সরকার চাইলে কোটা পরিবর্তন-পরিবর্ধন করতে পারবে। আর কোটায় কাউকে না পাওয়া গেলে বা পদ ফাঁকা থাকলে তা সাধারণ মেধা তালিকা থেকে পূরণ করা যাবে।
রায়ে আদালত বলেছেন, ২০১২ সালে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় ও আদেশ, ২০১৩ সালের লিভ টু আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের তা বহাল ও সংশোধিত আদেশ এবং ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারির অফিস আদেশের (মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনির কোটা) আলোকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা পুনর্বহাল করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হলো। একই সঙ্গে জেলা, নারী, প্রতিবন্দ্বী ব্যক্তি, উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসহ যদি অন্যান্য থাকে, সে ক্ষেত্রে কোটা বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হলো। এ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব, আদেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে পরিপত্র জারি করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।
এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আজ সারা দেশে চতুর্থ দিনের মতো চলছে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহবাগসহ নানা ক্যাম্পাস এই ইস্যুতে উত্তাল। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছেন কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।
প্রসঙ্গত, কোটা বাতিল করে সরকারের পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর রুল দেন হাইকোর্ট। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।
পরে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে ৪ জুলাই। রিট আবেদনকারীপক্ষ সময় চেয়ে আরজি জানালে সেদিন আপিল বিভাগ শুনানি পিছিয়ে দেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে গত মঙ্গলবার আবেদন করেন দুই শিক্ষার্থী।
দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য বুধবার (১০ জুলাই) আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। কিছু পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনাসহ এ আদেশ দেওয়া হয়। এ স্থিতাবস্থা চার সপ্তাহের জন্য উল্লেখ করে আপিল বিভাগ আগামী ৭ আগস্ট পরবর্তী দিন ধার্য করেন। তবে আদালতের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' এর নেতারা। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা।
মন্তব্য করুন