কলকাতার ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের বসুন্ধরাস্থ বাসায় পাসপোর্ট রেখে পালিয়ে যান মোস্তাফিজ ও ফয়সাল। তারা দুজন কলকাতার সঞ্জিবা গার্ডেনসে আনার হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেন। আসামি আসামি ফয়সাল আলী সাহাজীর ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে ও জবানবন্দিতে এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন।
বুধবার (৩ জুলাই) আসামি ফয়সাল দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেনের আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
গত ২৭ জুন শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহের আদালত ফয়সালের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড চলাকালীন আসামি ফয়সাল স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান তার জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন।
ডিবির আবেদনে বলা হয়েছে, মামলার আসামী ঘাতক দলের প্রধান শিমুল ভুইয়ার সাথে মোস্তাফিজ ও ফয়সাল আর্থিক সাহায্য লাভের আশায় মার্চের শেষের দিকে যোগাযোগ করে। ঘাতক শিমুল ভুইয়া মোস্তাফিজ ও ফয়সালকে বড় অংকের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে একটা কাজ করে দেওয়ার জন্য ভারতের কলকাতায় যেতে বলে। পাসপোর্ট, ভিসা, টিকেটসহ সকল কাজ শিমুল ভুইয়া করে দিবে বলে আশ্বাস দেয়। জরুরী পাসপোর্ট করার জন্য মোস্তাফিজ ও ফয়সালকে টাকাও দেয়। জরুরীভাবে পাসপোর্ট করে মোস্তাফিজ ও ফয়সাল আনুমানিক ১৫ এপ্রিল খুলনা থেকে ঢাকায় এসে অত্র মামলার ভিকটিম আনোয়ারুল আজিম আনারকে প্রলুব্ধ করে অপহরণ পূর্বক হত্যা মামলার মূলপরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের বসুন্ধরার বাসায় উঠে। পরদিন মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের পিএস পরিচয়ধারী সিয়াম হোসেন নামে এক লোক উক্ত বাসায় এসে শাহীনের নির্দেশ মোতাবেক দুজনকে (মোস্তাফিজ ও ফয়সাল) নিয়ে ভারতীয় ভিসার জন্য
যমুনা ফিউচার পার্কের কাছে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রে নিয়ে যায় এবং সিয়াম মোস্তাফিজ ও ফয়সাল দ্বয়কে বলে শাহীন স্যারই আপনাদের পাসপোর্টের জন্য টাকা দিয়েছিল, তিনিই (শাহীন) আপনাদের দ্রুত ভিসা করে দিবেন।
আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আনুমানিক ১৫ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত মোস্তাফিজ ও ফয়সাল মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের তত্ত্বাবধানে বসুন্ধরাস্থ বাসায় ছিল। শাহীনের পিএস সিয়াম হোসেন তাদের (মোস্তাফিজ ও ফয়সাল) দেখাশোনার দায়িত্বে ছিল। সিয়াম তাদের (মোস্তাফিজ ও ফয়সাল) জানিয়েছিলো যে, তাদের ভিসার জন্য শাহীন ব্যাংক স্টেটমেন্ট তৈরি, রোগের প্রেসক্রিপশনসহ আনুসঙ্গিক কাজের জন্য প্রচুর টাকা খরচ করছে। ইতোমধ্যে মোস্তাফিজ ও ফয়সাল ভারতীয় চিকিৎসা ভিসা পেয়ে আনুমানিক ২৫ এপ্রিল ঢাকা থেকে খুলনা ফিরে যায়। ঘাতক শিমুল ভুইয়া ও আক্তারুজ্জামান শাহীনের পরিকল্পনা মোতাবেক মোস্তাফিজ ও ফয়সাল ২ মে ভারতের কলকাতায় যায় এবং নিউমার্কেট এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে ওঠে অবস্থান করতে থাকে। পরিকল্পনা মোতাবেক মোস্তাফিজুর রহমান ফকির ১০ মে কলকাতার নিউটাউনস্থ সঞ্জিবা গার্ডেন্স নামক বাসায় যায়। মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের পরিকল্পনায় ভিকটিম আনোয়ারুল আজিম আনার বাসায় গেলে ঘাতক দলের প্রধান শিমুল ভুইয়ার নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় ঘাতক দলের সদস্যরা জিহাদ, ফয়সাল, মোস্তাফিজসহ অজ্ঞাতনামারা ভিকটিমকে অজ্ঞান করে হত্যা করে এবং লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে মৃতদেহ থেকে হাড় ও মাংস আলাদা করে নিশ্চিহ্ন করে ফেলে। ঘাতক দলের সদস্য মোস্তাফিজ ও ফয়সাল কিলিং মিশন শেষ করে ১৯ মে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসে এবং অপহরণ পূর্বক হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের বসুন্ধরার বাসায় উঠে। পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবারের লোকজন শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করলে মূল ঘাতক শিমুল ভুইয়া গ্রেপ্তার হয় এবং পুলিশের তৎপরতা টের পেয়ে ফয়সাল ও মোস্তাফিজ পালিয়ে গিয়ে আত্মগোপন করে।
গত ১২ মে সন্ধ্যায় আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস শেরেবাংলা নগর থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন। এই মামলায় শিমুল ভুইঁয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুইঁয়া ওরফে আমানুল্যাহ সাঈদ, তানভীর ভুইঁয়া, শিলাস্তা রহমান, কাজী কামাল আহমেদ বাবু ও মোস্তাফিজুর রহমান ফকির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া এ মামলায় দায় স্বীকার না করায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন