নদীমাতৃক মুন্সীগঞ্জের একসময় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল নৌপথ। তবে সড়ক পথের উন্নয়নের কারণে অভ্যন্তরীণ অনেক নৌপথ এখন বন্ধ।
পদ্মা-মেঘনা-ধলেশ্বরী-গোমতী ও ইছামতি নদী দ্বারা বেষ্টিত মুন্সীগঞ্জ জেলা। একসময় জেলা থেকে উপজেলা কিংবা অন্যান্য জেলায় যাতায়াতের জন্য স্বস্তির ভ্রমণ হিসেবে নৌপথের প্রাধান্য ছিল। তবে কালের বিবর্তনে দেশে সড়কপথের উন্নয়নের কারণে অভ্যন্তরীণ ও জাতীয় রুটের নৌ চলাচল ক্ষীণপ্রায়।
এদিকে বন্ধ হয়ে গেছে মুন্সীগঞ্জ-কাটপট্টি-তালতলা-সিরাজদিখান-ডহরী নৌরুট। পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার নৌপথে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি-কাঁঠালবাড়ি নৌরুট বন্ধ। বন্ধ হয়ে গেছে ধলেশ্বরী নদী থেকে পদ্মা নদীতে নৌযোগে বের হবার বিভিন্ন পথ। বন্ধ রয়েছে মুন্সীগঞ্জ থেকে মতলবের কালীপুরা লঞ্চ চলাচলও।
স্বল্প পরিসরে যাত্রীদের সুবিধার্থে মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ নৌরুটে কিছু লঞ্চ এখনো সচল রয়েছে। তা ছাড়া চাঁদপুর, শরীয়তপুর, বরিশালসহ বেশকিছু রুটের যাত্রীও উঠানামা করে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চ ঘাট দিয়ে।
চাঁদপুরের যাত্রী মো. বেলাল বলেন, সড়কপথে যাতায়াতে সময় কম লাগলেও যানজটের কারণে সেই সুফল থেকে বঞ্চিত আমরা। বর্তমানে লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধি পেলেও নদীপথে চলাচল অনেক স্বস্তির। তাই নৌরুটগুলো সচল করার দাবি যাত্রীদের।
বরিশালের লঞ্চযাত্রী মো. আমির হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু হওয়াতে আমাদের যাতায়াত দ্রুত হয়েছে। তবে সড়ক পথে দুর্ঘটনার মাত্রা বেশি। সময় বেশি লাগলেও লঞ্চের যাত্রা অনেক আরামদায়ক। তবে যাত্রী কম থাকায় অনেক লঞ্চ বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি ভাড়াও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি মনে করি, লঞ্চের মান বৃদ্ধি করেলে আমাদের মতো আরও অনেকেই লঞ্চে যাতায়াত করতে আগ্রহী হবে।
অভ্যন্তরীণ মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ নৌরুটের যাত্রী মোহাম্মদ শাওন বলেন, আমরা সড়ক পথ থেকে নৌপথে চলাচল করতে অনেক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তাই সময় বেশি লাগলেও নৌপথে চলাচল করে থাকি। এই রুটে অন্তত ৮৪ লঞ্চ ছিল। তবে বর্তমানে এর তিন ভাগের এক ভাগ লঞ্চ দিয়ে নৌরুটটি সচল রাখা হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে কাঠপট্টি, বেতকা, আবদুল্লাহপুর, তালতলা ও ডহরী রুটের নৌ চলাচল। সড়কের পাশাপাশি এই নৌপথগুলো সচল হলে মানুষ উভয় পথ দিয়েই স্বচ্ছন্দে চলাচল করতে পারবে।
মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শহীদ-ই-হাসান তুহিন জানান, স্থানীয় নদীগুলো সচল থাকলে মানুষের নৌপথে চলাচল, মৎস্য আহরণসহ কৃষি জমিতে সেচ সুবিধা, স্বল্প খরচে পণ্য পরিবহন সুবিধা পাওয়া যাবে। এতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন ভাবে দখলের পথে স্থানীয় কালিদাস সাগর নদী, ইছামতি নদী, কাজলরেখা, কাটাখালি খাল, মুন্সীরহাট খালসহ বিভিন্ন নদ-নদী। জলাশয় গুলো দখল মুক্ত করে ব্যবহারের উপযোগী করলে জলাবদ্ধতা অনেকটাই নিরসন হবে। জৌলুস ফিরে পাবে নৌপথগুলো।
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপন বলেন, ইতোমধ্যে আমরা অভ্যন্তরীণ একটি নৌরুট সচল করার জন্য কাজ শুরু করেছি। মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী থেকে দীঘিরপার হয়ে পদ্মা নদী পর্যন্ত এই ১৮ কিলোমিটার রজতরেখা নদী উদ্ধারে কাজ শুরু হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় জেলার অন্যান্য নৌরুটগুলোও সচল করা হবে। ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের নৌরুটগুলো সচল করতে এবং নদীগুলোর জৌলুস ফিরিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় আমাদের কাজ অব্যাহত রয়েছে।
মন্তব্য করুন