মেঘলা আকাশ, টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির কারণে সড়কে পথচারীদের তেমন আনাগোনা নেই। মাঝে মাঝে যার যার গন্তব্যের উদ্দেশে দু-একটা যানবাহন আসা-যাওয়া করছে।
শুক্রবার (২৮ জুন) বিকেলে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ধান্যদৌল এলাকার খালের পাশের সড়কে হঠাৎই দেখা এক ব্যক্তির সঙ্গে। তার কাঁধে মাছ ধরার চাঁইয়ের মতো ব্যতিক্রমধর্মী চাঁই। তার নাম রঞ্জিত বিশ্বাস ( ৩৫ ) । তিনি এসেছেন হবিগঞ্জ জেলা থেকে। তিনি জেলার বানিয়াচং উপজেলার বাসিন্দা। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে ঘুরে তিনি কুঁচিয়া মাছ শিকার করে। মা, এক ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ৬ সদস্যের সংসার তার।
রঞ্জিত বিশ্বাসের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে খাল, বিল ও জলাশয়ে চাঁই পেতে কুঁচিয়া ধরে বিক্রি করে দীর্ঘ ১১ বছর যাবৎ জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন তিনি। বছরের সব দিন এ কাজ করলেও বর্ষা মৌসুমে এই কাজে সফলতা বেশি। তবে শীতকালে সংসার চালাতে এই পেশার পাশাপাশি অন্য কাজ করতে হয় তাকে। বর্ষা মৌসুমে কুঁচিয়া মাছ ধরে প্রতিদিন গড়ে ৮শ থেকে ৯শ টাকা উপার্জন হয় তার। এই উপার্জন দিয়েই চলছে তার ৬ সদস্যের সংসার।
রঞ্জিত বলেন, এ পেশায় জড়ানোর আগে আমি দিনমজুরের কাজ করতাম। সবসময় হাতে কাজ থাকত না। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। একদিন কুঁচিয়া মাছ ধরার এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয়। তার সঙ্গে কথা বলে ও আয়ের আশা দেখে এ পেশায় জড়িয়ে পড়ি। তার কাছ থেকেই শিখেছি কুঁচিয়া ধরার কলাকৌশল। তারপর থেকে মনেপ্রাণে এ পেশায় এখনো আছি। এ মাছটির বিদেশে বেশ চাহিদা থাকায় এর কদরও রয়েছে।
কুঁচিয়া মাছ কীভাবে ধরেন এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে চাঁইয়ের ভেতর কেঁচো দিয়ে চাঁইগুলো খাল, বিল, ও বিভিন্ন জলাশয়ে খুঁটি গেড়ে পেতে রাখি। তার পরদিন আবার চাঁইগুলো উঠিয়ে নিই। পরে চাঁইগুলো থেকে কুঁচিয়া সংগ্রহ করে পাইকারদের কাছে বাজার ওঠানামা করার কারণে প্রতি কেজি ৩০০ আবার কখনও ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি করি। পাতানো সব চাঁইয়ে কুঁচিয়া না ধরা পড়লেও যে কয়টাতে ধরা পরে তাতে আড়াই থেকে ৩ কেজি কুঁচিয়া পাই। কোনো কোনো দিন এর বেশিও পাই, আবার কোনো কোনো দিন কম কুঁচিয়া ধরা পড়ে। তবে কোনো দিন খালি হাতে ফিরি না। কুঁচিয়া জীবিত রাখতে বড় বালতির পানিতে জিইয়ে রাখি।
তিনি বলেন, এ পেশায় কষ্টও আছে। প্রতিদিন কেঁচো সংগ্রহ করা এবং প্রতিটি চাঁইয়ে কেঁচো ঢুকিয়ে অনেক জায়গা হেঁটে হেঁটে কুঁচিয়া থাকতে পারে এরকম স্থানে পাততে হয়। পরদিন আবারও হেঁটে হেঁটে সব চাঁই তুলে আনতে হয়। এতে বেশ পরিশ্রমও হয়। সারাদিনের ধকল শেষে রাতে হাত-পা ব্যথা করে।
কুঁচিয়া বা কুইচা একটি ইল প্রজাতির মাছ। এরা Sybranchidae পরিবারের অন্তর্গত। এ মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Monopterus cuchia । এই মাছটিকে এ দেশে ২০১২ সালের সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের রক্ষিত প্রাণীর তালিকায় তফসিল ২ অনুযায়ী সংরক্ষিত করা হয়। এ মাছটি দেখতে অনেকটা বাইম মাছের মতো। সাধারণত কুঁচিয়া মাছ খাল, বিল, পুকুর, জলাশয় এবং বর্ষা মৌসুমে পানি জমা পতিত জমিতে থাকে। কুঁচিয়া মাছ জলাশয়ের পাড়ের সামান্য পানির নিচের গর্তে বসবাস করে। তবে এরা আহার সংগ্রহ করতে জলের মধ্যে অন্যান্য মাছের মতো ঘোরাঘুরি করে। এ দেশে এর কদর না থাকলেও বিদেশের অনেক দেশেই কুঁচিয়া মাছের বেশ চাহিদা রয়েছে। রঞ্জিতের মতো আরও অনেকেই কুঁচিয়া মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
মন্তব্য করুন