গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ২৯টি জায়গায় ধস দেখা দিয়েছে। ভারি বৃষ্টির কারণে বাঁধের মাটি সরে গেছে। ধস দেখা দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের উপর দিয়েই পথচারী ও যান চলাচল করছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলায় ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ মেরামতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এতে নদী-তীরবর্তী এলাকার মানুষ ভাঙনের দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে বর্ষা ভরা মৌসুম শুরুর আগেই ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ মেরামতের দাবি জানিয়েছেন জেলা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম বাবু। তিনি বলেন, বর্ষার আগে শুকনা মৌসুমে বাঁধগুলো মেরামত করলে মজবুত ও টেকসই হতো। বর্ষার সময় কাজ করলে তা স্থায়ী হয় না।
তবে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ভারি বৃষ্টির কারণে বাঁধের বিভিন্ন স্থানের মাটি ধসে গেছে। জরুরিভাবে সেগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, বন্যার কবল থেকে গাইবান্ধা জেলাকে রক্ষা করতে মোট ২৪০ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে ৭৮ কিলোমিটার বাঁধ উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীরে নির্মিত। ১৯৬২ সালে নির্মিত গুরুত্বপূর্ণ এ বাঁধ জেলার চারটি উপজেলার ভেতর দিয়ে গেছে। এটি উত্তরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন থেকে সদর ও ফুলছড়ি হয়ে সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ি ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত। বাঁধটি চলাচলের রাস্তা হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও বাঁধটি টেকসইভাবে সংস্কার করা হয়নি।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ২৯টি স্থানে মাটি সরে ধস দেখা দিয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- সদর উপজেলার শহর রক্ষা বাঁধের ডেভিড কোম্পানীপাড়া, খোলাহাটি ইউনিয়নের বাহারবন্দ, মোল্লা বাজার সুইস গেটের পাশে, কিশামত বালুয়া কানিপাড়া, মালিবাড়ি ইউনিয়নের বারবলদিয়া, কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট, কামারজানি বাজার, গিদারি ইউনিয়নের বাগুরিয়া, ধুতিচোরা, সুন্দরগঞ্জের হরিপুর ইউনিয়নের খেয়াঘাট, শ্রীপুর ইউনিয়নের চাপরা ও গোয়ালপাড়া।
শুক্রবার (২৮ জুন) জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সুন্দরগঞ্জের শ্রীপুর ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ী এলাকায় বাঁধ বেহাল। ভারি বৃষ্টির কারণে বাঁধের মাটি সরে ফাটল দেখা দিয়েছে। কয়েকটি স্থানে বাঁধের নিচ থেকে মাটি কেটে উপরে ফেলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের ওপর দিয়ে পথচারী ও যানবাহন চলাচল করছে। বাঁধের বেশির ভাগ জায়গায় নদীভাঙনে ঘরবাড়ি হারানো মানুষ বসতি স্থাপন করেছেন।
সদরের খোলাহাটি ইউনিয়নের কিশামত বালুয়া গ্রামের সমাজসেবক প্রকৌশলী শামীম প্রামাণিক বাদল বলেন, ভারি বৃষ্টির কারণে বাঁধটির দুপাশের মাটি সরে গিয়ে বড় আকারে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বাঁধের উপর দিয়ে পথচারীরা ও সবধরণের যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এমনকি বাঁধ সংলগ্ন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাঁধের উপর মোলস্না বাজার নামে একটি বড় বাজার রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধটি সংস্কার করা না হলে যেকোনো সময় বড় ধরণের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
ডেভিড কোম্পানিপাড়ার বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, বৃষ্টিতে মাটি সরে যাওয়ায় বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এর মধ্যে বাঁধের কাঁচা রাস্তা দিয়ে ট্রাক্টর চলাচল করায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এ জন্য বাঁধের উপর দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধটি সংস্কার করা প্রয়োজন।
পাউবোর গাইবান্ধা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, বাঁধের ৮ থেকে ১০টি স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাঁধের ধসে যাওয়া স্থানগুলো জরুরিভাবে মেরামতের কাজ করা হবে।
মন্তব্য করুন