ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী শ্যামকুড় ইউনিয়নের ভবনগর গ্রাম। এ গ্রামের বনাঞ্চলে রয়েছে প্রায় ২০০ এর অধিক কালোমুখো বিরল প্রজাতির হনুমান । এ গ্রামের মানুষের সঙ্গে এদের রয়েছে সখ্যতা। ঠিক কতদিন ধরে হনুমানগুলো এখানে বসবাস করে তা এই গ্রামের মানুষেরও জানা নেই।
বন অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সাল থেকে বন অধিদপ্তরের সিসিএফ আমির হোসেন চৌধুরীর প্রচেষ্টায় সরকারিভাবে প্রতিদিন এসব হনুমানদের খাবারের জন্য ১৬ কেজি কলা, ২ কেজি বাদাম, পাউরুটি ৫০ পিস ও সবজি ২ কেজি বরাদ্দ করা হয়েছে। আর এ সব খাবার হনুমানদের দিয়ে বেড়ান ভবনগর গ্রামের নাজমু হাসান নামের এক যুবক। নাজমুলের ডাক চিৎকার শুনলেই কালো মুখো হনুমানগুলো লাফাতে লাফাতে ছুটে আসে তার কাছে। তারা নাজমুলের হাত থেকে খাবার খায় অনেকটাই নির্ভয়ে।
ভবনগর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, বন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ২০০টি হনুমানের জন্য যে পরিমাণের খাবার দেওয়া হয় তা দিয়ে তাদের ক্ষুধা মেটে না। সব সময়ই ক্ষুধায় কাতর থাকে হনুমানগুলো। তা ছাড়া আগের তুলনায় হনুমান বেড়ে যাওয়ায় তাদের খাদ্য সংকট আরো বেশি দেখা দিয়েছে। যে কারণে এদের রক্ষায় ও অভয়ারণ্য তৈরির ব্যাপারে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়াটা জরুরি।
হনুমানদের দেখভালকারী নাজমুল হাসান জানান, বন অধিদপ্তর থেকে যে পরিমাণের খাবার দেওয়া হয় তা চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য। যে কারণে খাবারের সন্ধানে বিভিন্ন দিকে ছুটাছুটি করে মানুষের ফসল নষ্ট করছে। এ ছাড়াও এলাকার বন জঙ্গল কমে যাওয়ায় এরা লোকালয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এদের নিরাপদ থাকার জায়গা ও পরিমাণ মত খাবার জরুরি হয়ে পড়েছে।
ভবনগর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মিকাইল হোসেন বলেন, দিন দিন এলাকায় বড় বড় গাছগুলো কমে যাওয়ার কারণে তাদের থাকার সমস্যা হচ্ছে। আবার তাদের যে পরিমাণের খাবার দেওয়া হচ্ছে তাও সামান্য। হনুমানগুলো খাবারের কারণে লোকালয়ে গিয়ে সাধারণ মানুষের ফসলসহ বসতঘরেরও ক্ষতি করছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমাদের এলাকার বড় বড় গাছগুলো রক্ষা করতে হবে আগে। বড় বড় গাছগুলো নষ্ট হয়ে গেলে আমাদের এলাকার হনুমানগুলো রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আতিবুর রহমান বলেন, হনুমান পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এদের মারা ও নিধন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ প্রাণীটি মানুষের সঙ্গে মিলে-মিশে থাকতে পছন্দ করে। অন্য প্রাণী থেকে এদের রোগ বালাইও কম হয়। এদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।
মহেশপুর ও কোটচাঁদপুরের বন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, এসব হনুমানের ওপর প্রতিবেদন করিয়ে খাবারের বরাদ্দ করা হয়েছিল। এরা সব সময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। যার কারণে কোনোসময় তারা বেশি থাকে আবার কোনোসময় তারা সংখ্যায় কম থাকে। হনুমানগুলোর রক্ষাণাবেক্ষণের জন্য অভয়ারণ্য তৈরির খুবই প্রয়োজন।
মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইয়াসমিন মনিরা কালবেলাকে বলেন, হনুমান যে ভবনগর গ্রামে বসবাস করে বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি বিষয়টি জেনে কি করা যায় দেখব।
মন্তব্য করুন