মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার পাংগাশিয়া গ্রামের সিকান্দার ঘরামীর একমাত্র সন্তান মো. মিলন। জন্মের পর কখনো দেখেনি বাবা সিকান্দার ঘরামীকে। জন্মের ২৪ বছর পার হলেও একদিনও বাবাকে দেখেনি তিনি। বাবাকে শেষবারের মত হাসপাতালের বেডে মৃত অবস্থায় দেখবে সেটিও কখনো কল্পনা করেননি মিলন।
দীর্ঘ ২৪ বছর পর খুঁজে পেয়েছেন বাবাকে, তবে জীবিত নয় মৃত অবস্থায়। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিকান্দার ঘরামীর মৃত্যুর পর খোঁজ মেলে সিকান্দার ঘরামীর পরিবারের।
জানা গেছে, বুধবার (২৬ জুন) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সিকান্দার। স্বজনহীন এ মানুষটির লাশ দাফন নিয়ে ঝামেলায় পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে দেখতে পান অসুস্থজনিত কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন স্থানীয় আজিজুল হক পার্থ নামে এক সংবাদকর্মী।
সংবাদকর্মী আজিজুল হক পার্থ বলেন, ২৪ বছর আগে থেকে সিকান্দার আলী মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া, চাঁদপুরের মতলব, কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকার বিভিন্ন মাজারে ঘুরে ঘুরে জীবনযাপন করেছেন। একাধিক মানুষ উনাকে চিনেন এ অঞ্চলের মানুষ হিসেবে। কিন্তু তার স্বজনদের বিষয়ে কেউ কিছু জানে না।
বাউশিয়া ইউনিয়নের মধ্য বাউশিয়ার বউ মস্তানের মাজার, পুরান বাউশিয়ার সোলায়মান লেংটার দরবার, নয়াকান্দীর এক পাগলের মাজার ও সর্বশেষ গত কয়েকমাস বড় রায়পাড়ার শামছু পাগলার দরবারে ভবঘুরে জীবনযাপন করছিলেন। গত ১০/১২ দিন আগে অসুস্থ পড়লে স্বজনহীন মানুষটার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করাই। ভর্তি করার সময় তিনি নিজেই রেজিস্ট্রার খাতায় নিজের নাম, ঠিকানা বলে যান। আমি লোকটার ঠিকানা অনুযায়ী খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু সেভাবে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তার মৃত্যুর পর গজারিয়া থানার ওসি মো. রাজিব খাঁনের আন্তরিক চেষ্টায় তার পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায়। পরে রাত ৯টায় সিকান্দার ঘরামীর একমাত্র ছেলে হাসপাতালে আসে। জন্মের পর বাবাকে চোখে দেখে নাই, বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে সেটাই জানা ছিল না তার।
মৃত বাবাকে পেয়ে মো. মিলন ঘরামী বলেন, বুঝ হওয়ার পর থেকে বাবাকে খুঁজে ফিরেছি কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাবাকে পেলাম। মৃত বাবার মুখখানি দেখলাম, স্বাত্বনা তো রইল। বাবাকে নিজ হাতে দাফন করতে পারলাম।
গজারিয়া থানার ওসি মো. রাজিব খাঁন বলেন, ঘটনাটা শুনে অনেক খারাপ লেগেছে। আর আমি আমার দ্বায়িত্ব পালন করেছি মাত্র।
মন্তব্য করুন