কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা সদরে অবস্থিত চান্দিনা আল আমিন ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা ও চান্দিনা আল আমিন এতিমখানা কমপ্লেক্স নামের পৃথক প্রতিষ্ঠান দুটোর একটিমাত্র মাঠ। এই মাঠে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা প্রাতঃ সমাবেশ করেন, গেয়ে উঠেন জাতীয় সংগীত। এতিমখানার শিশুরা বিকেলে এই মাঠে খেলাধুলার পাশাপাশি শারীরিক কসরত করে থাকেন। প্রতি বছর জাতীয় দিবসগুলোতে এই শিশু সদনের শিশুরা এবং মাদ্রাসার ছাত্ররা মিলে উপজেলা পর্যায়ের প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে। প্রথম বা দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে নিয়ে আসে কৃতিত্বের পুরস্কার। ফলে এখানকার একমাত্র মাঠটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এখন বিপত্তি হলো বৃষ্টি। সামান্য বৃষ্টিতেই মাঠটি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যায়। ফলে খেলাধুলা, শারীরিক কসরত, প্রদর্শনীর চর্চাসহ বিভিন্ন সহপাঠ্য কার্যক্রমগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি পুরো বর্ষা মৌসুমে মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীরা পানির কারণে জাতীয় সংগীত ও পরিবেশন করতে পারেন না। এছাড়া পাশেই অবস্থিত চান্দিনা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। মুসল্লীরা শৌচাগারে যেতে হলেও পানি দিয়ে হেঁটে যেতে হয়।
এতিমখানার সুপার মাওলানা মো. দ্বীনুল ইসলাম জানান, ১৯৮৩ সালে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. মনিরুজ্জামান ৬৬ শতাংশ ভূমির উপর আল-আমিন এতিমখানা কমপ্লেক্সটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এই এতিমখানায় ৮০ জন ছাত্র রয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে ৭ জন। পরে ১৯৮৪ সাল থেকে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা হিসেবে কার্যক্রম শুরু হয়ে ১৯৯৬ সালে পর্যায়ক্রমে কামিল (মাস্টার্স) পর্যন্ত উন্নীত হয়ে বর্তমানে উপজেলার সর্ববৃহৎ দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চান্দিনা আল আমিন ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা। গোটা উপজেলায় একমাত্র এই প্রতিষ্ঠানেই কামিল শ্রেণিতে হাদিস বিভাগ পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী এই মাদ্রাসায় শিশু শ্রেণি থেকে কামিল শ্রেণি পর্যন্ত ১৩ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নরত। তাদের পাঠদানে ৪৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাদ্রাসা ও এতিমখানাটির পেছনে উত্তর পার্শ্বে সরকারি খালটির বেশিরভাগ অংশ ভরাট করে বেদখল করে ফেলেছে দখলদাররা। অন্য অংশগুলোতেও ড্রেজিং এর ব্যবস্থা না করায় ভরাট হওয়ার উপক্রম। এছাড়া পশ্চিম অংশে একটি মৎস্য প্রকল্প গড়ে উঠেছে। সেই মৎস্য প্রকল্পের মালিকরা অবৈধভাবে খালের মধ্যে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে। ফলে পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এতেই বর্ষা মৌসুমজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় মাদ্রাসাটিতে। মাঠসহ নিচতলার কক্ষগুলো পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যায়। চরম ভোগান্তিতে পড়েন ছাত্র-ছাত্রী ও এতিম শিশুরা।
চান্দিনা আল আমিন ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. জাকির হোসেইন জানান, দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি এলেই মাঠ পানিতে তলিয়ে যায়। এতে করে নানা সমস্যা দেখা দেয়, শিক্ষার্থীরা মাঠে চলাচল করতে পারে না, বিকেলে খেলাধুলা করতে পারে না, পানিতে পচা গন্ধ, এবং এই পানি থেকে পোকামাকড় ও মশা-মাছি বেড়েছে। এতে ছাত্রদের বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ বেড়ে যায়। পেছনের খালে বাঁধ দেওয়ার কারণে পানি সরতে পারে না। আমরা প্রশাসনের সুদৃষ্টি ও সহযোগিতা কামনা করছি।
এ ব্যাপারে চান্দিনা পৌরসভার মেয়র মো. শওকত হোসেন ভূইয়া বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। কেউ অবহিত করেনি। শিগগিরই ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়ে মাদ্রাসা ও এতিমখানার মাঠটি পরিদর্শন করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ ব্যাপারে চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাবের মো. সোয়াইব বলেন, আমি তো পানিবন্দির বিষয়টি জানি না। আমাকে অধ্যক্ষ বা সুপার কেউ জানায়নি। মাদ্রাসা ও এতিমখানার পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মন্তব্য করুন