সিলেটে মন্তর গতিতে বন্যার উন্নতি হলেও আবার শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। একইসঙ্গে নামতে শুরু করছে ভারতের পাহাড়ি ঢল। এদিকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজ আবাসস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন বানভাসি মানুষ।
জেলার বিভিন্ন গ্রাম ও নগরের বিভিন্ন এলাকার মানুষজন বাড়িঘরে ফিরলেও তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকেই, কিন্তু নতুন করে আবারও বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আতঙ্কিত সিলেটবাসী। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাটের ক্ষতচিহ্ন ভেসে উঠছে।
এরইমধ্যে বুধবার (২৬ জুন) সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে আবারও পানিবন্দি হওয়ার শঙ্কায় আছেন জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষজন।
বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় অনেকেই ঘরে ফিরলেও, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জেলায় বন্যায় পানিবন্দি মানুষ আছেন ৭ লাখ ৮৪ হাজার ২৫০ জন। জেলার ৭৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন ১২ হাজার ৬৭৯ জন। বন্যায় পানিতে রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ক্ষতচিহ্ন ভেসে উঠছে বিভিন্ন জায়গায়। ৮০০ কোটি টাকা মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
চার দিন ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সিলেট মহানগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামছিল। কিন্তু আবারও বৃষ্টির কারণে নিচু এলাকার সড়ক ও বাসাবাড়িতে ঢুকছে পানি। অন্যদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় লোকালয় থেকে পানি কমে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বসতবাড়িতে ফিরেছিলেন মানুষজন। তবে যারা বাড়ি ফিরেছেন, এখন তারাও পোহাচ্ছেন নানা ভোগান্তি।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, বুধবার পর্যন্ত সিলেট জেলায় বন্যা আক্রান্ত মানুষ আছেন ৭ লাখ ৮৪ হাজার ২৫০ জন। জেলার ৭৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন ১২ হাজার ৬৭৯ জন।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বুধবার সকাল ৬টার তথ্যানুযায়ী, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে কুশিয়ারা নদীর অমলসিদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গতকালের তুলনায় প্রত্যেকটি পয়েন্টে পানি ৩ থেকে ১২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি কমেছে।
সিলেট আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এদিকে, সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর পানি কমে আসায় বের হতে শুরু করেছে ক্ষতচিহ্ন। এর মধ্যেই রাস্তাঘাট, মৎস্য ও কৃষিতে ৭৭৯ কোটি ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে।
সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকাটি সুরমা নদীর তীরে। এখনো নদীর পানি তীর ছুঁই ছুঁই করছে। এখানে বৃষ্টি হলেই পানি ওঠানামা করে এখানে। উজানের ঢলে নেমে আসা পানির সঙ্গে বৃষ্টির পানিতেও ডুবে যায় সিলেট নগরী। কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই নগরীর বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়।
সিলেট সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, নগরের ২৫০ কিলোমিটার রাস্তায় পানি উঠাতে আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ১৩ উপজেলায় আউশ বীজতলা, সবজি ও বোনা আমন ধানের ১৫ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার ৯৮ হাজার ৬৫৩ কৃষক। এতে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭৫ কোটি ২১ লাখ টাকায়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেট জেলার অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যায় সিলেটের ১৩টি উপজেলার ১৬০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। যার আর্থিক পরিমাণ প্রায় ১১৯ কোটি টাকা।
সড়ক ও সেতু বিভাগের জানায়, বন্যায় সিলেট জেলার ৪০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। আর্থিক হিসেবে প্রায় ৮৫ কোটি টাকার ক্ষতি।
সিলেট জেলা মৎস্য অধিদপ্তর অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যায় সিলেট জেলায় ৪৪ কোটি ৮৫ লাখ ৬৬ হাজার টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। জেলার ২১ হাজার ১১১টি পুকুর-দিঘী-খামারের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।
মন্তব্য করুন