বগুড়া জেলা কারাগারের ছাদ ফুটো করে রশির মাধ্যমে পালিয়ে যান মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি। মঙ্গলবার (২৫ জুন) রাতে এ ঘটনা ঘটে। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই পুলিশ তাদের ফের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। বুধবার (২৬ জুন) ভোরে শহরের চেলোপাড়া চাষি বাজারের সামনে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে কারাগারের নিরাপত্তাসহ পুরো ঘটনা তদন্তে কারা মহাপরিদর্শকের কার্যালয় ও জেলা প্রশাসন থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনা খতিয়ে দেখতে বুধবার বগুড়ায় যান অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ওই চার আসামি হলেন- কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী এলাকার নজরুল ইসলাম মজনু ওরফে মঞ্জু, নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার আমির হোসেন ওরফে আমির হামজা, বগুড়ার কাহালুর মো. জাকারিয়া এবং বগুড়া সদর এলাকায় ফরিদ শেখ।
বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। জেলা প্রশাসক জানান, মঙ্গলবার রাত ৩টা ৫৫ মিনিটে বগুড়া জেলা কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি পালিয়ে যাওয়ার খবর পাই। পরে বুধবার ভোরে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।
অন্যদিকে পলাতক ওই চার আসামিকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় সকাল ১০টায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, মঙ্গলবার রাতে কারাগারে কনডেম সেল থেকে আসামিরা পালিয়ে যায়। তারা প্রত্যেকেই হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।
পুলিশ সুপার বলেন, আসামিরা ছাদ ফুটো করে বেরিয়ে যায়। পরে তারা বিছানার চাদর ছিঁড়ে তা দিয়ে দড়ি তৈরি করে দেয়াল টপকে বাইরে বের হয়। এর আগেই তারা কয়েদির পোশাক খুলে ফেলে। কারাগার থেকে বের হয়ে তারা করতোয়া নদীর সেতু অতিক্রম করে চেলোপাড়া এলাকায় চলে যায়। ভোর রাত ৩টা ৫৫ মিনিটে সংবাদ পেয়ে পুলিশের একাধিক দল শহরে তল্লাশি শুরু করে। ভোর রাত ৪টা ১০ মিনিটে শহরের চেলোপাড়া চাষী বাজার থেকে চারজনকেই গ্রেপ্তার করেন বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই খোরশেদ আলম।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, পালিয়ে যাওয়ার পরপরই জেলা কারাগার থেকে পাঠানো ছবি দেখে তাদের চিহ্নিত করা হয়। গ্রেপ্তারের পর ওই চারজনকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে বুধবার সকালে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের শনাক্ত করেন।
এসপি বলেন, কারাগার পরিদর্শন করে দেখা গেছে, চারজন একইসঙ্গে একটি কক্ষে (সেল) অবস্থান করতেন। তারা পরিকল্পিতভাবে ছাদ ফুটো করে পালিয়ে যায়। ওই চার আসামি কারাগারের যে সেলে থাকতেন সেটি ব্রিটিশ আমলে নির্মিত। এ কারণে ছাদে কোনো রড ছিল না। চুন-সুড়কির কাজ করা ছাদ কেটে তারা বেরিয়ে গেছে।
এসপি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃত চারজনের বিরুদ্ধে জেল থেকে পালানোর ঘটনায় মামলা দায়ের হবে।
গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া এসআই খোরশেদ আলম বলেন, ‘রাতে ঘটনা জানার পর আমরা সব জায়গায় খোঁজ নিতে শুরু করি। এ সময় মনে হয় যেহেতু জেলখানা করতোয়া নদীর তীরে, সুতরাং আসামিরা সেই পথ ধরে পালানোর চেষ্টা করবে। সে কারণে চারজন কনস্টেবল নিয়ে শহরের চেলোপাড়া সেতুর পূর্ব পাশে অবস্থিত চাষী বাজার এলাকার দিকে যাই। পরে সেখান থেকে চারজনকে আটক করার পরপরই সদর থানা পুলিশের আরও দল সেখানে পৌঁছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি জেলখানা থেকে পাঠানো ছবির সঙ্গে মিলিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। পরে তাদের ডিবি কার্যালয়ের নিয়ে যাওয়া হয়।’
এদিকে কারাগারের সার্বিক নিরাপত্তা ও কারা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির বিষয় খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসন থেকে ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম।
ঘটনা জানার পর বগুড়া জেলা কারাগার পরিদর্শন শেষে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান বলেন, বগুড়ার কারাগারটি অনেক পুরাতন, ১৮৩৩ সালে নির্মিত। ফলে এর যে ছাদ তা পুরাতন, সেখানে তারা ছিদ্র করে বেরিয়ে যায়। পুরো ঘটনাটি তদন্ত করা হবে। কীভাবে তারা সকলের নজর ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে গেল। কার কী দায়িত্ব ছিল সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, কারাগার থেকে আসামিদের পালিয়ে যাওয়ার কারণে এখানে নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি চিহ্নিত হয়েছে। এখন তদন্ত করে দেখতে হবে দুর্বলতা কোথায় ছিল? তারা পালিয়ে যাওয়ার সময়ের একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গেছে, সেটাকে তদন্তের কাজে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য করুন