দেশের চা শ্রমিকদের মধ্যে নারীরা বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। কারণ পাতা তোলা শ্রমিকদের মধ্যে ৯৫ শতাংশের মতো কর্মী নারীরা। এদেরই করতে হয় চা শিল্পের সবচেয়ে কষ্টের কাজ। পাতা তোলার কাজে প্রতিদিন সেকশনে পৌঁছাতে ও বাড়ি ফিরতে তাদের ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত হাঁটতে হয়। পাতা তুলতে হয় সারাদিন দাঁড়িয়ে। একটা সময় পাতা তুলতে তুলতে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন। কর্মস্থলে শৌচাগার ও প্রক্ষালন কক্ষের সংখ্যাও হাতেগোনা। দুপুরে খাবার খেতে হয় খোলা জায়গায়। আর তারা যে খাবার খান তাও পুষ্টিকর নয়।
বেসরকারি এনজিও সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড) এর চা শ্রমিকদের নিয়ে করা গবেষণামূলক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার (২৬ জুন) শ্রীমঙ্গলের ব্র্যাক লার্নিং সেন্টার অডিটোরিয়ামে সেড আয়োজিত প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার এবং আইনি অধিকার অর্জনে বাংলাদেশের চা শ্রমিকের জীবন দক্ষতা বৃদ্ধি শীর্ষক অনুষ্ঠানে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়।
সেড এর পরিচালক মি. ফিলিপ গাইনের সঞ্চালনায় দিনব্যাপী প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক ও রিসোর্স পারসন হিসেবে ছিলেন সেড এর গবেষক ফাহমিদা আফরোজ নাদিয়া, নাজদিক কর্মকর্তা কাত্তিয়ানি চান্দোলা, চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরি, চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখন লাল কর্মকার, মৌলভীবাজারের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সত্যকাম চক্রবর্তী ও বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলামসহ মোট ১৪ জন প্রশিক্ষক ও রিসোর্স পারসন।
প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার শীর্ষক প্রশিক্ষণে চা শ্রমিক পরিবারে বেড়ে উঠা শিক্ষার্থী, পঞ্চায়েত সদস্যসহ জেলার ১৩টি বাগানের মোট ৩৯ জন প্রতিনিধি প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে অংশ নেন। এ ছাড়াও ওই প্রশিক্ষণে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও জাতীয় দৈনিকে কর্মরত ১০ জন সাংবাদিকও অংশ নেন।
প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে সাংবাদিক-প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে ফিলিপ গাইন এর গবেষণামূলক ৪ ফর্মার ‘চা বাগানে নারীর সুরক্ষায় প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার’ বিষয়ক তথ্য সমৃদ্ধ বই তুলে দেওয়া হয়। বইটিতে চা বাগানে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার, গর্ভবতী মায়ের পরিচর্যা এবং চা বাগানের প্রত্যন্ত লেবার লাইনের এক দরিদ্র মায়ের গর্ভপাতসহ চা বাগানের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বিস্তর গবেষণামূলক অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য স্থান পেয়েছে।
প্রশিক্ষণের প্রথম সেশনে সেড এর পরিচালক ফিলিপ গাইনের আলোচনার উপর মতামত পর্বে মতামত ব্যক্ত করেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ও কলামিস্ট সৈয়দ আমিরুজ্জামান। তিনি বলেন, চা বাগানে মায়েদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা তারা কাজ বাদ দিয়ে বাইরে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারেন না। এক্ষেত্রে বাগানেই প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।
মন্তব্য করুন