সিলেটে ধীরগতিতে উন্নতি হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজ আবাসস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন বানভাসী মানুষ। জেলার বিভিন্ন গ্রাম ও নগরের বিভিন্ন এলাকার মানুষজন বন্যার পানিতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগসহ নানা ধরনের রোগবালাই। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাটের ক্ষত চিহ্ন ভেসে উঠছে।
এদিকে বন্যার কারণে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় বাসা বাড়ির রিজার্ভ ট্যাংকি ও টিউবওয়েল ডুবে গিয়ে দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি সিলেটজুড়ে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ।
জেলায় বন্যা পানিবন্দি মানুষ আছেন ৭ লাখ ৮৯ হাজার ১৩১৫ জন। জেলার ৭৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন ১২ হাজার ৯০৫ জন। চার দিন ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সিলেট মহানগরেরও বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামছে। তবে অনেক নিচু এলাকার সড়ক ও বাসাবাড়ি থেকে পুরোপুরি পানি নামেনি এখনো। অন্যদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় লোকালয় থেকে পানি কমে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বসতবাড়িতে ফিরছেন বাসিন্দারা। তবে যারা বাড়ি ফিরেছেন তারা পোহাচ্ছেন নানা ভোগান্তি।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বিপৎসীমার উপরে রয়েছে এখনো সুরমা নদী ও কুশিয়ারা ৩টি পয়েন্টের পানি। এছাড়া অন্যান্য নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় দেখা দিয়েছে তীব্র খাবার ও পানীয় জলের সংকট। ঘর থেকে পানি নেমে গেলেও চুলা ভিজে থাকায় রান্না করতে পারছেন না অনেকেই।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, মঙ্গলবার (২৫ জুন) পর্যন্ত সিলেট জেলায় বন্যা আক্রান্ত মানুষ আছেন ৭ লাখ ৮৯ হাজার ১৩১৫ জন। জেলার ৭৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন ১২ হাজার ৯০৫ জন। সোমবার (২৪ জুন) এ সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ১৯৪৮ জন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে মঙ্গলবার (২৫ জুন) বিকেল ৬টা পর্যন্ত সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার অমলশীদ পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯৬ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত রয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৫৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। আর মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, ফেঞ্চুগঞ্জের ওপর দিয়ে জুড়ি নদী, শেরপুরের ওপর দিয়ে মনু নদী কুশিয়ারা নদীতে যুক্ত হয়। তাই কুশিয়ারা নদীর পানি নামার হার ধীরগতির। এ ছাড়া নিম্নাঞ্চলের প্রায় সব এলাকা প্লাবিত তাই পানি ধীরগতিতে নামছে। এখন বৃষ্টিপাত কমে গেলে ও সিলেট অঞ্চলে প্রতিদিন রোদ হলে বন্যার পানি কমে যাবে।
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মজয় দত্ত কালবেলাকে বলেন, পানিবাহিত রোগের রোগী আছে, তবে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে নায়। পানিবাহিত রোগ মোকাবেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। বন্যায় পানিবাহিত রোগ থেকে বাচার জন্য সবাইকে পানি বিশুদ্ধতাকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করার জন্য স্বাস্থ বিভাগ থেকে আহ্বান করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট আমরা বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের ইউনিয়নভিত্তিক টিমও কাজ করছে।
মন্তব্য করুন