ছাত্রাবাসের পাশের বাড়ির ছেলের সঙ্গে ফ্রি-ফায়ার গেম, আড্ডা ও ধূমপান সবই করতেন। আগের মামলার খরচ, ছাত্রাবাসের বকেয়া এবং মাদক সেবনের টাকা জোগাড় করতে সেই বন্ধুসুলভ প্রতিবেশীকেই করলেন অপহরণ। কিন্তু তাতে সুবিধা আদায় করতে না পেরে, বিপদ আঁচ করে তাকে হত্যার পর মরদেহ ফেলে দেওয়া হয় টিনের ট্যাংকে। নিজেদের আড়াল করতে নেন নানা কৌশল। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি অপহরণকারীদের।
পাবনার ঈশ্বরদীর চাঞ্চল্যকর কিশোর তপু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ঘটনায় ব্যবহৃত একটি চাকু ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুপুরে পাবনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের হলরুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- পাবনা সদর উপজেলার দুবলিয়া এলাকার জয়নাল আবেদীন জয় (২০) এবং ঈশ্বরদীর মশুরিয়া পাড়ার ঈসা খালাসি (১৯)। এ ঘটনায় সোহেল নামের আরেক আসামি পলাতক। নিহত তপু মাশুড়িয়া পাড়ার আবুল কাশেমের ছেলে।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, গত ১৫ জুন দুপুরে ঈশ্বরদীর মশুড়িয়া কলেজপাড়ার কিশোর তপু (১৪) নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। এরপর অজ্ঞাত অপহরণকারী কিশোর তপুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে তপুর বাবাকে ফোন করে তপুকে অপহরণ করা হয়েছে বলে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। ৭ হাজার টাকা দেওয়ার পরও তপুর খোঁজ না পাওয়ায় এ ঘটনায় তপুর মা বাদী হয়ে পরদিন ১৬ জুন থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মূল আসামিদের শনাক্ত করা হলেও ভিকটিমকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে গত ২২ জুন মশুড়িয়াপাড়াস্থ অরণ্য ছাত্রাবাসের তৃতীয় তলায় একটি টিনের ট্যাংক থেকে তপুর অর্ধগলিত রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর ঢাকায় পালানোর সময় পাবনা শহরের ঢাকাগামী বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রধান অভিযুক্ত জয়কে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়- তারা ঈশ্বরদী কলেজের পেছনে অরন্যা ছাত্রাবাসে ভাড়া থাকত। ভুক্তভোগী তপুর বাড়ি ছাত্রাবাসের পাশেই হওয়ায় একসঙ্গে ফ্রি-ফায়ার গেম, আড্ডা দিত ও ধূমপান করত। জয় ইতঃপূর্বে আতাইকুলা থানার একটি হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় মামলার খরচ এবং ছাত্রাবাসে খরচ এবং মাদক সেবনের জন্য টাকার প্রয়োজন হওয়ায় সোহেল ও ঈসার সঙ্গে অপহরণের পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কৌশলে তপুকে ছাত্রাবাসে ডেকে এনে জিম্মি করে। তপু আতঙ্কে চিৎকার শুরু করলে তারা চাকু দিয়ে হত্যা করে এবং বেল্ট দিয়ে তার হাত বেঁধে একটি ট্যাংকে ভরে রাখে। পরবর্তীতে আসামি জয় ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে তার বাবার কাছে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে। এ ছাড়াও আসামিরা ঘটনা আড়াল করতে নানা কৌশল অবলম্বন করে কিন্তু গোপন সংবাদ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ তাদের শনাক্ত করে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মাসুদ আলম, ঈশ্বরদী থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম, ঈশ্বরদী থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মনিরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন