বাকেরগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৪, ০৮:২৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগ

নিয়ামতি ইউনিয়নে জেলেদের মাঝে ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ। ছবি : কালবেলা
নিয়ামতি ইউনিয়নে জেলেদের মাঝে ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ। ছবি : কালবেলা

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়নে মার্চ-এপ্রিল, মে-জুন এই ৪ মাস নদীতে জেলেদের জাটকা ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞা থাকায় তালিকাভুক্ত জেলেদের ভিজিএফের চাল বরাদ্দ দেয় সরকার।

রোববার (২৩ জুন) ও সোমবার (২৪ জুন) সকালে ইউনিয়ন পরিষদে ইউপি সদস্য আবুল কালাম জেলেদের ভিজিএফ চাল বিতরণ করেন। এ সময় নিয়ামতি ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত তদারকি (ট্যাগ) কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক একাডেমি শিক্ষা কর্মকর্তা এনামুল হক অনুপস্থিত ছিলেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নিবন্ধনকৃত দরিদ্র জেলেদের জন্য প্রতি মাসে ৪০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। চলতি বছরে নিয়ামতি ইউনিয়নের ১৫০ জন জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল বিতরণ করার কথা থাকলেও দুই ধাপে দুই মাসের চাল একত্রে জনপ্রতি ৮০ কেজি না দিয়ে তাদেরকে দেওয়া হয়েছে ৫০ কেজি করে। ট্যাগ অফিসারের অনুপস্থিতিতে প্রকাশ্যে অন্তত জনপ্রতি ৩০ কেজি করে চাল কম দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বরাদ্দের বাকি চাল লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ও ইউপি সদস্য আবুল কালাম তালুকদারের বিরুদ্ধে। চাল বিতরণের প্রথম থেকেই এই অভিযোগ করে আসছিল স্থানীয় জেলেরা।

গত ৪ মাসে ১৫০ জন জেলেদের বরাদ্দের চাল মোট ২৪ টন হলেও সেখান থেকে জেলেদের চাল কম দিয়ে ৯ টন চাল আত্মসাৎ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ও ইউপি সদস্য আবুল কালাম হাওলাদার।

এ ছাড়া গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদে ২৪ জুন তদারকি (ট্যাগ) অফিসারের অনুপস্থিতিতে ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় ২৬৬ জন দুস্থ নারীকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে অসৎ উদ্দেশ্যে তাদের জনপ্রতি দেওয়া হয়েছে ২৭ থেকে ২৮ কেজি চাল। দুস্থ নারীদের জন্য ৭ টন ৯৮০ কেজি চাল থেকেও প্রায় ৬০০ কেজি চাল আত্মসাৎ করেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, চলতি বছরের ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই সমুদ্রে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকার জন্য নিয়ামতি ইউনিয়নের ১০ জন জেলেদের জন্য ৫৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হলেও ৫৬০ কেজি চাল এখন পর্যন্ত কোনো জেলে পাইনি। ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ভিজিএফ ১৪১২ জনের জন্য ১৪ টন ১২০ কেজি চাল নিয়ামতি ইউনিয়ন পরিষদে বরাদ্দ দেওয়া হলেও সেখানেও জনপ্রতি পরিমাপে কম দিয়ে ও অনেকের মাঝে চাল না দিয়ে প্রায় ২ টন চাল আত্মসাৎ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির। চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর ধরে সরকারি বরাদ্দের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা প্রশাসন।

নিয়ামতি ইউনিয়নের রূপারজোর গ্রামে জেলে পাড়ায় গেলে জেলেরা অভিযোগ করেন, আমাদের এই জেলা পাড়ায় ৫৭ জন জেলে পরিবার রয়েছে। আমরা ২৪ পরিবারের মধ্যে নিবন্ধনকৃত দরিদ্র ২৪ জেলে এই বছর চাল পেয়েছি। আমাদের চেয়ারম্যান ২ মাসে মোট এক কার্ডে ৮০ কেজি চাল না দিয়ে দিয়েছেন ৫০ কেজি। বাকি চাল চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য আত্মসাৎ করেছেন।

ইউপি সদস্য কালাম তালুকদারের কাছে জেলেদের চাল কম দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো অনিয়ম নাই, গতকাল ট্যাগ অফিসারের সামনে গত দুই মাসের চাল বিতরণ করা হয়েছে। ওয়ার্ডভিত্তিক মেম্বাররা চাল নিয়ে ২০ জনেরটা ভাগ করে দিয়েছেন ২৫ জনকে, এজন্যই ঝামেলা হয়েছে। ২০ জনের চাল ২৫ জনের মধ্যে ভাগ কেনো হলো জানতে চাইলে তিনি উত্তর দিতে পারেননি।

জেলেদের চাল ও অন্যান্য বরাদ্দের চাল বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চেয়ে ফোন করা হলে চেয়ারম্যানের হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বরিশালে মিটিংয়ে রয়েছি। বাকেরগঞ্জ এসে সাক্ষাতে কথা বলব’- বলে ফোন কেটে দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়ামতি ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত তদারকি (ট্যাগ) অফিসার উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমি শিক্ষা কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, ২৩ জুন দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ছিলাম, সেখানে ৩নং ওয়ার্ড ও ৯নং ওয়ার্ডের জেলেদের চাল বিতরণ করা হয়েছে। জেলেদের সংখ্যা বেশি হাওয়ায় ভাগবাটোয়ারা করতে চেয়েছিলেন আমি বলেছি, আমার সামনে এগুলো চলবে না। কোনো এক মেম্বার পরিষদের বাইরে নিয়ে অন্য কোথাও বসে ভাগবাটোয়ারা করেছেন, মনে হয় একজনের চাল দুজনের মধ্যে বিতরণ করছেন, এ জন্য কম হতে পারে। সেটা আমার সামনে করেনি। আর সোমবার চাল দেওয়া হয় নাই। আজকের আমি ছুটিতে রয়েছি। তবে আমাকে না জানিয়ে আমার অনুপস্থিতিতে চাল বিতরণের নিয়ম নেই।

এ ছাড়া রোববার ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির পরিশোধে উপস্থিত ছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছু সময় উপস্থিত ছিলেন, এরপর চলে গেছেন।’

এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, গত দুই দিনে আমার কাছে জেলেরা মোবাইল ফোনে অভিযোগ করেছেন। সোমবার আলতাফ সিকদার নামে একজন জেলে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ দাখিলের বিষয়ে মৌখিকভাবে শুনেছি, কিন্তু লিখিত অভিযোগটি হাতে পাইনি। লিখিত অভিযোগটি হাতে পেলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, জেলে পরিবার প্রতি যা চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাই বিতরণ করতে হবে। সরকারি কোনো বরাদ্দের চাল কম দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অল্টারনেটিভ মেডিসিনকে ‘ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন’ বলে অভিহিত করার দাবি

ব্রিটিশ নির্বাচনে পরাজিত যেসব মন্ত্রী

আইএসপিআরের নতুন পরিচালক কর্নেল সামি

লাম্পি স্কিনে এক মাসে অর্ধশতাধিক গরুর মৃত্যু

ফরিদপুরে বাস-পিকআপ মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২

কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্মাননা পাচ্ছেন ২২ জন

কোটাবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন গণতন্ত্র মঞ্চের

টাঙ্গাইলে ঝিনাই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত

পদত্যাগের ঘোষণা ঋষি সুনাকের

ফেনসিডিলসহ নানি-নাতি আটক

১০

সাত দশক পর ফিলিস্তিনিপন্থি প্রার্থীর কাছে লেবার পার্টির পরাজয়

১১

ঢাকা মহানগর ওলামা দলের নতুন কমিটি

১২

নদীতে গোসলে নেমে মাদ্রাসা ছাত্র নিখোঁজ

১৩

‘ঘুষ’ ছাড়া রেজিস্ট্রি সেবা পান না নাঙ্গলকোটের সেবাগ্রহীতারা

১৪

পাকিস্তানে খেলার জন্য রোমাঞ্চিত শান্ত

১৫

সেন্টমার্টিনে মিয়ানমারের দুই সেনা ও ৩১ রোহিঙ্গা

১৬

পদ্মা সেতুর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

১৭

ইউরোপ-আমেরিকায় যায় নোয়াখালীর ছানার মিষ্টি

১৮

জামালপুরে ৬৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি

১৯

ন্যাশনাল স্টিম অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতার ফাইনাল শনিবার

২০
X