কুড়িগ্রামে ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপনের ঘোষণার পর উন্নয়নের আলোর মুখ দেখছে জেলাবাসী। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অঞ্চলটিকে ঘিরে বাণিজ্যিক হওয়ায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। পাল্টে যাবে এ জেলার দৃশ্যপট। কিন্তু উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সড়ক ও নৌপথের পাশাপাশি রেল যোগাযোগে গুরুত্ব দিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। এজন্য বন্ধ করে দেওয়া ১১৬ বছরের পুরোনো কুড়িগ্রাম পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন চালুর দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
জানা গেছে, ১৮৫৩ সালে ভারত উপমহাদেশে রেল যোগাযোগ শুরু হওয়ার পর ১৯০৮ সালে ব্রিটিশ সরকার কুড়িগ্রামে যোগাযোগের জন্য রেলপথ চালু করে। তৎকালীন কুড়িগ্রাম মহকুমা শহরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সদরের যাত্রাপুর এলাকায় রেলবাজারে রেলওয়ে স্টেশন স্থাপন করা হয়। ধরলা নদীর অব্যাহত ভাঙনে স্টেশনটি নদীগর্ভে বিলীন হলে ১৯২৬ সালের দিকে বর্তমান পুরাতন শহরে ১২ একর ৪২ শতক জায়গার উপর স্টেশনটি পুনঃস্থাপন করা হয়। যোগাযোগের ক্ষেত্রে স্টেশনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে থাকে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের আগে এ অঞ্চলের মানুষ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও যাতায়াতের জন্য এই স্টেশন ব্যবহার করে লালমনিরহাটের মোগলহাট হয়ে ভূরুঙ্গামারীর সোনাহাট দিয়ে ভারতে যেত। দেশভাগের পর সে পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ অংশে ওই রেলপথ কাগজে-কলমে থাকলেও ধীরে ধীরে ভূমিদস্যুদের হাতে চলে যায়।
আরও জানা যায়, দেশ স্বাধীনের আগে ১৯৬৭ সালে কুড়িগ্রাম থেকে উলিপুর হয়ে চিলমারী বন্দর পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণ করা হয়। এজন্য ১৯৬৭ সালে সদরের বেলগাছা ইউনিয়নের কালে মৌজায় জনগণের সুবিধার্থে কুড়িগ্রামে আরও একটি রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করা হয়। ২০০১ সালে বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে ভূমি দস্যুরা একজোট হয়ে পুরাতন স্টেশনটি বন্ধ করে ওই স্থানে বাসটার্মিনাল, মার্কেট, ভূরুঙ্গামারী-কুড়িগ্রাম বাইপাস সড়ক, শিশু পার্কসহ নানা স্থাপনার দাবিতে সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। সংগ্রাম কমিটির আন্দোলনের মুখে ২০০৬ সালের ৩০ জুন মন্ত্রণালয় পুরাতন রেল স্টেশনটি সরকারিভাবে কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। সংগ্রাম কমিটি তৎকালীন যোগাযোগ উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলুর মদদে রেলস্টেশনটি তুলে দেওয়ার রাজনৈতিক চাপে মন্ত্রণালয় স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়। এরপর তৎকালীন কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়র আবু বকর সিদ্দিক পুরাতন স্টেশনটি পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের জন্য আবেদন করেন। এখন কি অবস্থায় রয়েছে তিনি তা জানেন না। কালবেলাকে তিনি বলেন, তখনকার সময় জনগণের দাবির কারণে স্টেশনটি তুলে দেওয়া প্রয়োজন ছিল।
এরপর সেনা সমর্থিত সরকার দেশ পরিচালনায় আসলে স্টেশন এলাকা অক্ষত অবস্থায় থাকে। ২০০৮ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এলে ভূমিদস্যুরা নড়েচড়ে বসে। গত ১৬ বছরে ভূমিদস্যুরা পুরো স্টেশন এলাকা দখল করে নেয়। বর্তমানে স্টেশনটি দেকভাল করার মতো কেউই নেই। স্টেশনের টিন, লোহার খুঁটি, শাল কাঠের খুঁটি এমনকি প্লাটফরমের ইট চুরি হয়ে গেছে। নিজের জায়গা মনে করে ভূমিদস্যুরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাড়িঘর নির্মাণ করছে। অনেকে জায়গা দখল করে কয়েক লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিচ্ছে। দখলবাজরা শক্তিশালী হওয়ার কারণে কর্তৃপক্ষ জায়গা উদ্ধারে তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. হামিদুল হক খন্দকার বলেন, ইতোমধ্যে রেলপথ সম্প্রসারণ করে ভূরুঙ্গামারীর সোনাহাট স্থলবন্দর পর্যন্ত নেওয়ার প্রস্তাব করেছেন এবং জাতীয় সংসদে বক্তৃতায় বলেছেন বলেও জানান।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট রেলওয়ে ডিভিশনের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, কুড়িগ্রামে পুরাতন স্টেশনটির তেমন গুরুত্ব নেই। তবে ভবিষ্যতে গুরুত্ব বেড়ে গেলে স্টেশনটি আবার চালু করা হবে।
কুড়িগ্রাম থেকে সোনাহাট স্থলবন্দর পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের ব্যাপারে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ কালবেলাকে বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘিরে জেলার ভূরুঙ্গামারীর সোনাহাট স্থলবন্দর পর্যন্ত যোগাযোগে রেলকে সম্পৃক্ত করতে এলাকার জনগণের দাবি রয়েছে। বিষয়টি উদ্বোধন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। রেলওয়ের দখলকৃত জমি উদ্ধারে রেল কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা চাইলে জেলা প্রশাসন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
মন্তব্য করুন