ময়মনসিংহ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় চামড়ার হাট শম্ভুগঞ্জে কোথাও গরু ছাগলের চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় এ বছরও ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মৌসুমি ও পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ীরা। কাঁচা চামড়া কিনে এবার চরম বেকায়দায় ব্যবসায়ীরা।
শনিবার (২২ জুন) হাটে তোলা হলেও তেমন বেচাকেনা নেই, অল্প কিনে চলে গেছেন ট্যানারি মালিকরা।
চামড়ায় আবারও লবণ দিয়ে স্তূপ করে রাখতে হয়েছে আরও বাড়বে খরচের পরিমাণ। পাইকারি ব্যবসায়ীরা নগদ টাকায় চামড়া কিনলেও ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করতে হয় বাকিতে, বছরের পর বছর ঘুরেও আদায় করা যায় না পাওনা টাকা।
প্রতি শনিবার সম্ভুগঞ্জ চামড়া হাটে চামড়া বেচাকেনা হয় কোরবানির মৌসুমে প্রায় চার লাখের বেশি গরুর চামড়া আসে এই হাতে যার বাজারমূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা তবে বিক্রি না হওয়ায় যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়েছে ছাগলের চামড়া।
গত বছরের চেয়ে চামড়া প্রতি একশত থেকে দুই শত টাকা বেশি দামে চামড়া কিনেছেন আড়তদার। আকার ও প্রকারভেদে গরুর চামড়ার দাম পড়েছে ৫ থেকে ৮০০ টাকায় সোমবার (১৭ জুন) রাত থেকেই শুরু হয়ে মঙ্গলবার (১৮ জুন) চামড়ায় লবণ দেওয়ার কাজ শেষ হয়। আড়তে স্তূপ করে রাখা হয়েছে লবণ দেওয়া চামড়া সারি সারি চামড়ার স্তূপে ঢেকে রাখা হয়েছে পলিথিন দিয়ে। তারপরও বৃষ্টির পানি চামড়ায় আসছে নিচ দিয়ে। কোথাও কোথাও টিনের চালার ফুটো দিয়ে পানি পড়ছে চামড়ায়। বৃষ্টি কারণে অনেক চামড়া নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় তারা।
শম্ভুগঞ্জ চামড়ার হাট ঘুরে কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই অঞ্চলে কোনো ট্যানারি না থাকায় বাজারের সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন ট্যানারি মালিকরা। সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও নির্ধারিত দামে চামড়া কিনছেন না তারা। সিন্ডিকেট তৈরি করে যে শর্ত প্রয়োগ করেন সে অনুযায়ী চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য থাকেন- এমন অভিযোগও করেছেন কয়েকজন চামড়া বিক্রেতা।
কাশিগঞ্জ থেকে আসা লিয়ার মোহাম্মদ বলেন, ৫০০ গরুর চামড়া আর দুই হাজার ছাগলের চামড়া কিনেছি। ছাগলের চামড়া প্রতি পিস ১০ টাকা করে কিনে শ্রমিক ও লবণ বাবদ খরচ হয়েছে ৩০ টাকা। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা প্রতি পিস ছাগলের চামড়া ১০ টাকা দাম ধরছে।
সরকারি দামে চামড়া না কেনার কারণ জানতে চাইলে ট্যানারি মালিকরা বলেন, তাহলে সরকারের কাছে বিক্রি করেন। সরকার পাট, চাল ও ধান কিনতে পারে চামড়া কিনতে পারে না।
ফুলবাড়ীয়ার সঞ্চয় জানান, একটি চামড়া ক্রয় করে সেটিতে লবণ মেশানোর পর হাটে আনা হয়। এর সঙ্গে পরিবহন খরচও যোগ হয়। সবমিলিয়ে গড়ে একটি চামড়ার পেছনে ৮৫০ টাকা খরচ হয়েছে বিক্রেতাদের। বর্তমানে একটি লবণের বস্তা ১১শ টাকা দরে ক্রয় করতে হচ্ছে। সঙ্গে ৫০০ টাকা দিতে হচ্ছে শ্রমিককে আর পরিবহন খরচ এলাকাভেদে তারতম্য রয়েছে।
চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি সহসভাপতি শংকর সাহা বলেন, সহজেই টাকাটি পরিশোধ করা হয় এবং সরকার যে দামটি বেঁধে দিয়েছে, সেই মূল্য দিয়েই কিনেন তাহলেই প্রান্তিক পর্যায়ে চামড়া ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। চামড়া কেনার জন্য সরকার ঋণ সুবিধা দিলেও তা ঢাকার বাইরে আসে না। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাওনা পরিষদ এবং নির্ধারিত রেটে চামড়া কেনার জন্য ট্যানারি মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
রিলায়েন্স ট্যানারির মালিক মো. শাজাহান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, করোনার পর থেকে বৈশ্বিক মন্দার জন্য বাজার খারাপ যাচ্ছে। তাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অমূলক। সরকার নির্ধারিত মূল্যেই চামড়া ক্রয় করা হচ্ছে। সংরক্ষাণাগারের ব্যাপারে স্থানীয় শিল্পপতিদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মন্তব্য করুন