প্রতিপক্ষের ওপর রাজনৈতিক হামলা, নির্যাতন ও সামাজিক সংঘাত এখন ঝিনাইদহের শৈলকুপাবাসীর গলার কাঁটা। এ পরিস্থিতি থেকে কোনোভাবেই বের হতে পারছে না শৈলকুপাবাসী। নেতৃত্বের পরিবর্তন হলেও শৈলকুপার অতীত সহিংসতার ইতিহাস এখনো চলমান।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, ঝিনাইদহ-১ শৈলকুপা আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নায়েব আলী জোয়ার্দার বিজয়ী হওয়ার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তার সমর্থকরা। দীর্ঘদিনের বিরোধী অবস্থান থেকে ক্ষমতা ও নেতৃত্বের হাতবদলের পরও পরিত্রাণ পাচ্ছে না শৈলকুপাবাসী।
দীর্ঘদিন শৈলকুপায় রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মো. আব্দুল হাই এর একক আধিপত্য ছিল। তখন আব্দুল হাই এর অনুসারীরা প্রতিপক্ষের ওপর দমন-নিপীড়ন চালিয়েছিল বলে বর্তমান সংসদ সদস্যের সমর্থকদের ব্যাপক অভিযোগ আছে। এ অবস্থায় নিজেদের অবস্থান শক্ত হওয়ায় সংসদ সদস্য মো. নায়েব আলী জোয়ার্দ্দারের সমর্থকরা এখন দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষ গ্রুপের সমর্থকদের ওপর হামলা ও নির্যাতন শুরু করেছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। শুধু তাই নয়, এ হামলা নির্যাতন থেকে রক্ষা পাচ্ছে না সংখ্যালঘুরাও। এরই ধারাবাহিকতায় শৈলকূপা থানাতে হামলার মতোও ঘটনার জন্ম দিয়েছে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের অনুসারীরা। অথচ শৈলকুপাকে সব ধরনের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, হামলা-মামলা থেকে মুক্ত করে একটি পরিচ্ছন্ন শৈলকুপা গড়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন এই সংসদ সদস্য।
সরেজমিনে কথা হয় ১১নং আবইপুর ইউনিয়নের মেম্বার রবিউল ইসলাম লিটনের সঙ্গে। তিনি জানান, আমরা ১নং ও ২নং ওয়ার্ডের বেশকিছু লোকজন ফাজিলপুরের কাজিপাড়ায় মিটিং করে বাড়ি ফিরছিলাম। এ সময় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম মুক্তার মৃধার ছেলে ক্রীপালপুর গ্রামের সুমন মৃধার অনুসারী মিন্টু খা ও দুলাল শেখ লোকজন সঙ্গে নিয়ে ঢাল সুড়কি ও দেশীয় অস্ত্রসহ অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীরা রাজু নামের এক প্রতিবন্ধীকে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে।
আহত রাজুর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, সুমন মৃধার লোকজন মিন্টু খা ও দুলাল খা আমার ওপর হামলা চালিয়ে আমাকে আহত করে। আমার অপরাধ আমি মিন্টু খাদের সমাজ করি না তাই। এ বিষয়ে ফাজিলপুর ক্যাম্পে অভিযোগ করেও কোনো বিচার পাইনি।
অন্যদিকে শৈলকুপার ১২নং নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের শেখড়া বাজারে বর্তমান ক্ষমতাসীন গ্রুপের লোকজনের আক্রমণে বেশ কয়েকটি ঘর বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ বিশ্বাস জানান, গত ২১ জুন রাত ৯টার দিকে বর্তমান এমপির লোকজন আমার সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে অন্তত ১১টি বাড়ি ভাঙচুর করেছে। এসব হামলার ঘটনার পর থেকে গ্রামটির প্রতিপক্ষের সমর্থিত পুরুষরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে।
এদিকে উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রতিপক্ষ গ্রুপের উপর হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও চাঁদাবাজির ঘটনা অব্যাহতভাবে চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই হামলা ও লুটপাটের ঘটনা থেকে বাদ পড়ছে না সংখ্যালঘু পরিবার। এসব ঘটনায় বাড়িঘর ভাঙচুর, নগদ টাকাসহ গবাদিপশু লুট করার ঘটনা ঘটেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জানান, বর্তমান এমপির সমর্থক উমেদপুর ইউনিয়নের বক্কার মেম্বার, রয়েড়া গ্রামের শুভ, গবিন্দপুরের আব্দুল্লাহ ও কৃষ্ণপুর এর সাবেক মেম্বার আশরাফুল এর নেতৃত্বে বাহাদুরপুর, কদমতলা, গবিন্দপুর, লক্ষণদিয়া, ইব্রাহীমপুর গ্রামে উপনির্বাচন এর পর বিভিন্ন সময়ে হামলায় অন্তত ৫০টি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ ঘটনায় লক্ষণদিয়া গ্রামের আনোয়ারুল এর তিনটি গরু ও ৫টি ছাগল নিয়ে গেছে হামলাকারীরা, কৃষ্ণপুর গ্রামের আমিরুল এর ১টা গরু, কদমতলা থেকে অজ্ঞাত একজনের তিনটি গরুসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় ২০-২৫টি গরু নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, লুট করা এসব মালামাল ফেরত পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করলেও, প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মো. আজিম-উল আহসান কালবেলাকে জানান, শৈলকুপার যে কোনো সহিংস ঘটনার খবর ও অভিযোগ পেলে, পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এ ছাড়া দোষীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, ঘটে যাওয়া ঘটনা ছাড়াও, সহিংস ঘটনা ঘটতে পারে এমন সংবাদের প্রেক্ষিতে পুলিশ প্রশাসন অগ্রিম ব্যবস্থা গ্রহণ করছে; ফলে সেখানে সহিংস ঘটনা ঘটতে পারছে না।
মন্তব্য করুন