দেশি খেজুর একটি অত্যধিক পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ফল। এই ফলে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিনসহ স্বাস্থ্যকর নানা উপাদান বিদ্যমান। তবে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এবং গাছ থেকে রস বের করার ফলে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থেকে দিন দিনই হারিয়ে যাচ্ছে ফলটি। এতে মৌসুমি এ ফলের উপকারিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, দেশি প্রজাতির মৌসুমি এই ফলে রয়েছে ক্যালসিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, আয়রন, ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’ ও ‘কে’ সহ স্বাস্থ্যকর বিভিন্ন উপাদান। দেশি এই ফলটি মানবদেহের ঋতু পরিবর্তনকালীন রোগ প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর। তা ছাড়া এই ফল মানবদেহের রক্ত উৎপাদনে সহায়ক। হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে ও হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে, পাকস্থলী ও যকৃতের শক্তি বাড়াতে এ ফল কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
ফুল শেষে শীতের শেষভাগে খেজুর গাছে ফল ধরে। কাঁচা অবস্থায় খেজুর ফলের রং সবুজ হয়, আর এ ফলটি পরিপক্ব হলে হলুদ বর্ণ ধারণ করে। তারপর পাকা খেজুরের কাঁদি পানিতে কয়েক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে ফলটি নরম হয়ে খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে ওঠে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি বছরই শীতকালে খেজুর গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করার কারণে অধিকাংশ গাছেই ফল আসেনি। এতে রসের চাহিদা মিটলেও দেখা দিয়েছে দেশীয় খেজুরের সংকট। ফলে দেশি খেজুরের পুষ্টিগুণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সিংহভাগ মানুষ।
এ ছাড়াও এই উপজেলায় খেজুর গাছের সংখ্যাও আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। একসময় গ্রামীণ জনগোষ্ঠী শখ করে এ ফল গাছ রোপণ করলেও গত দেড় দশকে এই গাছ নতুন করে তেমন একটা রোপণ করা হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা। আর এ কারণেই দিন দিন এই গাছ উপজেলার প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা নুরুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, একসময় এই অঞ্চলে মৌসুমি ফল হিসেবে আম, কাঁঠাল, লিচুর মতো দেশি খেজুরেরও একটা আধিপত্য ছিল। দিন দিন খেজুর গাছ কমে যাওয়া আর অপরিকল্পিতভাবে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কারণে এ ফলটির উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। যে কারণে এ অঞ্চলে মৌসুমি ফল হিসেবে দেশি খেজুর সহজলভ্যতা হারাচ্ছে।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা রেয়াসত আলী কালবেলাকে বলেন, এখন দেশি খেজুর চোখে পড়ে না বললেই চলে। খেজুর গাছ কমে গেছে, আর যেসব গাছ আছে সেসব গাছে শীত আসলে খেজুর রসের জন্য গাছ তাড়ি দেয় গাছিরা। এ কারণে এসব গাছে খেজুর উৎপাদন হয় না।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, মৌসুমি ফল হিসেবে একসময় দেশি খেজুরের চাহিদা ছিল, তবে বর্তমান এ ফলটি তেমন একটা দেখা যায় না। অপরিকল্পিতভাবে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গাছ মরে যাওয়া ও নতুন করে খেজুর গাছ রোপণ না করায় পুষ্টিগুণে ভরা মৌসুমি এ ফলটি হারাতে বসেছে। এ ফলটি টিকিয়ে রাখতে ব্যক্তিগত থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরি হয়ে পড়েছে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. শঙ্খজিৎ সমাজপতি কালবেলাকে বলেন, দেশি খেজুর একটি মৌসুমি ফল। এ ফলে যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে। এই ফলে আছে নানাপ্রকার ভিটামিনস ও স্বাস্থ্যকর উপাদান। ফলটিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, সালফার, ফলিক অ্যাসিড, পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম, সালফারসহ উপকারী নানা উপাদান। তবে বর্তমান সময়ে অন্যান্য মৌসুমি ফলের মতো এই ফলটি সচরাচর চোখে পড়ছে না।
তিনি আরও বলেন, নতুন করে খেজুর চারা রোপণ করে প্রকৃতিতে এই গাছের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। আর যেসব গাছ আছে সেসব গাছের সবগুলো থেকে সমানে খেজুর রস সংগ্রহ না করে কিছু কিছু গাছ ফলের জন্য রাখা উচিত। এতে খেজুর রস ও খেজুর দুটোই পাওয়া যাবে।
মন্তব্য করুন