নরসিংদীর দুর্গম একটি উপজেলার নাম রায়পুরা। এ উপজেলার একটি পাহাড়ি এলাকার নাম মরজাল। এ এলাকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (বর্তমানে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট) মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকী টিলা আর কিছু জলাশয় ও ঝোপঝাড় নিয়ে গড়ে তোলেন ওয়ান্ডার পার্ক।
এটি বিনোদন কেন্দ্র হলেও এর অন্তরালে চলে সব অসামাজিক কর্মকাণ্ড। পার্কের ভেতরে দর্শনার্থীদের বসার স্থানগুলো যেন একটি খুপরি ঘর। সে ঘরেই চলে নানা অসামাজিক কার্যকলাপ। স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাসহ নানা বয়সের লোকজন এ পার্কে এসে লিপ্ত হয় অসামাজিক কার্যকলাপ। এতে করে এলাকার যুব সমাজসহ উঠতি বয়সী যুবক-যুবতী বিপথগামী হচ্ছে।
পার্কের ভেতরে রাত্রিযাপনের জন্য রয়েছে বিলাসবহুল একাধিক কটেজ। কটেজের প্রতিটি কক্ষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। সে কটেজে দুই জনের জন্য একটি রুমের ভাড়া রাত প্রতি ৩ হাজার টাকা। যার ফলে বলা যায় অনৈতিক কার্যক্রমের এক আড্ডাখানা মরজালের ‘ওয়ান্ডার পার্ক’। এ ওয়ান্ডার পার্কটি ঘুরে এসে অনেকেই পার্ক সম্পর্কে নানা মন্তব্য প্রকাশ করেন।
পার্কে গিয়ে দেখা গেছে, ৩৮ একরের আয়তন জুড়ে পার্কটির অবস্থান। ভেতরে রয়েছে বিলাসবহুল একাধিক কটেজ। কটেজের প্রতিটি কক্ষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এ ছাড়া পার্কে রয়েছে বিভিন্ন বয়সীদের জন্য বেশ কিছু রাইড। পুরো পার্কজুড়ে বিভিন্ন ভাস্কর্য ও স্থাপনা এবং বিশাল আয়তনের একটি লেক।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঈদের আমেজ কাটানোর জন্য অনেকে ছুটে যান সেখানে। একটু ভেতরে যেতেই চোখে পড়বে কিছু উঠতি বয়সের যুবক-যুবতিরা জুটিবদ্ধ হয়ে ঝোপঝাড়ে এবং বসার জন্য বানানো খুপরি ঘরে বসে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত রয়েছে। আর অন্যদিকে ভদ্র পরিবারের লোকজনকে হাঁটাহাঁটির সময় বিষয়টি নিয়ে নানা মন্তব্য করতে শোনা গেছে।
গত শুক্রবার পরিবার নিয়ে পার্কে ঘুরতে আসা আলাউদ্দিন নামে এক সরকারি চাকরিজীবী বলেন, ছুটির দিন হওয়ায় ছেলেমেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জনপ্রতি ২০০ টাকা করে টিকিট কেটে পার্কে প্রবেশ করেছি। পার্কে প্রবেশের পর বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে পরিবার নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে। ভেতরে দর্শনার্থীদের বসার জন্য বানানো বিভিন্ন খুপরি ঘর ও নির্জন স্থানে ভাস্কর্যের আদলে বানানো বসার স্থানে উঠতি বয়সী যুবক-যুবতীরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে এবং বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে রয়েছে। যা দেখে পরিবার নিয়ে আর ঘুরতে না পেরে বেরিয়ে আসলাম। আমার এতগুলা টাকাই জলে গেল।
এ পার্কের আশেপাশের এলাকাবাসীর অভিযোগ, অবৈধভাবে জোরপূর্বক জমি দখল করে লায়লা কানিজ লাকী পার্কটি স্থাপন করেছেন। তাছাড়া এলাকাবাসী আরও অভিযোগ করে বলেন, এ পার্কের মালিক লায়লা কানিজ লাকী তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে পার্কটি বর্তমানে চালাচ্ছেন। ফলে পার্কের বিরুদ্ধে কেউ কোনো কিছু বলার সাহস পায় না।
পার্কের পাশে বসবাসকারী নজরুল ইসলাম নামে একজন বলেন, প্রথমে এ পার্কটি স্থাপিত হওয়ায় আমরা খুবই খুশি হয়েছিলাম। আমরা মনে মনে ভেবেছিলাম, আমাদের ছোট ছেলে-মেয়েরা একটি বিনোদনকেন্দ্র পেয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে যা দেখেছি তা মুখে বলার মতো না। এই পার্কের ভেতরে রীতিমতো টাকা দিলে সব হয়। উঠতি বয়সের স্কুল কলেজে পড়ুয়া তরুণতরুণীরা এই পার্কে আসে শুধু অসামাজিক কার্যকলাপ করার জন্য।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এলাকার এক যুবক বলেন, এখানে সন্ধ্যার পর মাইক্রোবাস, সিএনজি ও প্রাইভেটকার যোগে কিছু লোকজনের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। তারা রাতভর এখানে আমোদ ফুর্তি করে থাকে। এ কার্যক্রমের সঙ্গে স্থানীয় ও আশপাশের একাধিক প্রভাবশালী লোকজন জড়িত। এ পার্কটি মাদক সেবন ও বাণিজ্যের একটি নিরাপদ আড্ডাখানাও বলা চলে। কেননা এ এলাকায় দিনের বেলায়ই লোকজনের পদচারণা খুবই কম। রাতের বেলা মানুষের চলাচল নেই বললেই চলে। এ ছাড়া এই পার্ক থেকে রাতের অন্ধকারে মাদক ব্যবসায়ীদের একটি নিরাপদ রোড হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
পার্কের এমন শত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পার্কের ম্যানেজার সৈয়দ ইমরান হোসেন সজিব বলেন, আমরা এই পার্ক তৈরি করেছি সব শ্রেণি-পেশার মানুষের আনন্দ উপভোগ করার জন্য। আর এখানে যেহেতু ইকো রিসোর্ট করা হয়েছে তাতে কেউ আসলে তাদের ভাড়ার মাধ্যমে রুম দেওয়া হয়ে থাকে। তবে মাদকের বিষয়টি আর অনৈতিক কার্যক্রমের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এ ব্যাপারে মরজাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান বলেন, মাদক ব্যবসা ও অসামাজিক কার্যকলাপ এ ব্যাপারটা আমার জানা নেই। তবে ব্যাপারটা মিথ্যা বলে আমার মনে হয়।
মন্তব্য করুন