ভোলায় বন বিভাগের বোটম্যান নূরউল্ল্যাহর আদর-সোহাগে বড় হয়ে উঠছে একটি হরিণশাবক। ‘শশী’ নামের হরিণ শাবকটির মা-বাবা এখন নূরউল্ল্যাহই। নাম ধরে ডাকলেই শশী ছুটে যাচ্ছে সবার কাছে। মানুষের ভালোবাসায় বড় হয়ে উঠছে সাবকটি।
প্রায় সাড়ে ৫ মাস বয়সী হরিণটি এখন মানুষের সব খাবার খায়। এই মায়াবী হরিণ শাবকটিকে দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছে মানুষ।
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার শশীগঞ্জ বিটের বোটম্যান নূরউল্ল্যাহ জানান, ৩০ জানুয়ারি সকালের দিকে তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন চর মোজ্জাম্মেল গ্রামের হানু দালাল বাজার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় খাবারের সন্ধানে ছুটে আসে একটি মা হরিণ। এ সময় হরিণটি একটি শাবক জন্ম দেয়। ওইদিনই দুপুরের দিকে স্থানীয়দের আনাগোনার শব্দ শুনে শাবকটিকে রেখে পালিয়ে যায় মা হরিণটি।
পরে স্থানীয়রা বিষয়টি ওই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে জানালে ওই ইউপি চেয়ারম্যান বন বিভাগকে খবর দেন। খবর পেয়ে নূরউল্ল্যাহসহ বন বিভাগের ৪-৫ জন নিয়ে রাতে চর মোজ্জাম্মেল থেকে সাবকটিকে উদ্ধার করে শশীগঞ্জ বিটে নিয়ে আসেন। এরপর হরিণটিকে লালনপালন করার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। পরম যত্নে হরিণটিকে লালনপালন করেন তিনি। শাবকটির নাম দেন শশী।
তিনি আরও জানান, প্রায় ৩ মাস পর্যন্ত হরিণ শাবকটিকে দৈনিক দেড় লিটার করে গরুর দুধ খাওয়ানো হয়। পরে আস্তে আস্তে তাকে ভাতের মাড়, ঘাস খাওয়াতে শুরু করেন। বর্তমানে হরিণটি ঘাসের পাশাপাশি নূরুউল্ল্যাহর সঙ্গে ভাত, নুডুলস, সেমাই, মুড়ি-চানাচুর, চাসহ বিভিন্ন ধরনের মানুষের খাবার খায়।
নূরউল্ল্যাহ বলেন, যেখানে যাই হরিণ শাবকটিও আমার পিছু পিছু দৌঁড়ে যায়। ঘুমাতে গেলে সেও আমার বিছানায় উঠে পাশে বসে থাকে।
চাকরি জীবনের মাত্র ৬ মাসের মধ্যে শশীকে পেয়ে নূরউল্ল্যাহ যেন তার পরিবার থেকে দূরে থাকার কষ্টটা ভুলে গেছেন। তবে মায়ায় কষ্ট হলেও নিয়ম অনুযায়ী হরিণ শাবকটিকে বনে অবমুক্ত করতে হবে বলে জানান তিনি।
চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সহিদুল্ল্যাহ কিরণ জানান, ৩০ জানুয়ারি দুপুরের দিকে তাকে চর মোজ্জাম্মেল থেকে স্থানীয়রা একটি হরিণ শাবক উদ্ধারের খবর দেন। পরে তিনি বন বিভাগে খবর দেন। এ ছাড়াও বন বিভাগের লোকজন যতক্ষণ পর্যন্ত না যাবে ততক্ষণ স্থানীয়দের হরিণটি যত্নে রাখতে অনুরোধ করেন।
তিনি আরও জানান, হরিণ শাবকটি এখন অনেক ভালো আছে ও সুস্থ আছে। হরিণটিকে এক নজর দেখতে মাঝে-মধ্যে ছুটে যান শশীগঞ্জ বিট কর্মকর্তার অফিসেও।
তজুমদ্দিন উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা মো. রফিক সাদী জানান, শশী নামে হরিণ শাবকটি দীর্ঘদিন ধরে আমাদের এলাকার বন বিভাগের বিট কর্মকর্তার অফিসে পালিত হচ্ছে। এলাকার মানুষসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন হরিণ শাবকটি এক নজর দেখতে ভিড় করেন। হরিণ শাবকটিকে শশী নাম ধরে ডাকলে সবার কাছে ছুটে আসে। সবাই হরিণটির সঙ্গে আনন্দে সময় কাটান। আর হরিণটি মানুষের আদর ও ভালোবাসায় মুগ্ধ।
শশীগঞ্জ বিটের কর্মকর্তা গাজী আবুল বাশার জানান, হরিণ শাবকটি অনেক ভালো আছে ও সুস্থ আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ আসা মাত্রই দ্রুত গভীর বনে হরিণ শাবকটি অবমুক্ত করা হবে।
মন্তব্য করুন