কুড়িগ্রামে টানা কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদনদীর পানি বাড়তে থাকা অব্যাহত রয়েছে। জেলার নদ-নদীগুলোর মধ্যে ধরলা ও তিস্তা নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) তিস্তার পানি বেড়ে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়াও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও এখনো বিপৎসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ার কারণে নদনদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের প্রায় ১৫ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে এসব এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা। ডুবে গেছে সবজিক্ষেতসহ বিভিন্ন উঠতি ফসল।
সরেজমিনে সদর উপজেলার যাত্রাপুরের রসুলপুর, পোড়ার চর ও কালির আলগা ও উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লারহাট, খুদিরকুঠি, ভোগলের কুঠি, এলাকার একাংশে গিয়ে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের পানির তীব্র স্রোতের কারণে বিশাল এলাকাজুড়ে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা নদের ভাঙনে ভেঙে যাওয়া ভিটে থেকে তাদের বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। চারদিকে বন্যার পানি থাকায় শুকনা জায়গার অভাবে এসব নদীভাঙা মানুষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঠাঁই নিয়েছে। গত এক সপ্তাহের ভাঙনে প্রায় ১৫-২০টি পরিবার তাদের ভিটেমাটি হারিয়েছে।
রসুলপুর গ্রামের জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মাহাবুবার রহমান বলেন, মসজিদের খুব কাছ দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পানির স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে, আমরা চিন্তায় পরেছি মসজিদটি ভাঙনে পরতে পারে।
এ ছাড়াও তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকায় রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা বুড়িরহাট স্পার বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়াও তিস্তা নদীর তীরবর্তী থেতরাই ইউনিয়নের গোরাইপিয়া, জুয়ান সতরা, চর নিয়াসা ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের খিতাবখা, গতি আসাম চরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ৯ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের আরো প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে প্রায় অর্ধশতাধিক চর প্লাবিত হয়েছে। এসব নদনদী তীরবর্তী অঞ্চলে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সন্ধ্যা ৬টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুড়িগ্রামের তথ্যমতে, দুধকুমার নদের পানি সমতলে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমায় অবস্থান করছে ও ধরলা নদীর পানি তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি বেড়ে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ কালবেলাকে বলেন, কুড়িগ্রামে উজানের ঢলে নদনদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার্তদের উদ্ধারের জন্য চারটি স্পিড বোট প্রস্তুত রয়েছে। বন্যার্তদের জন্য নগদ ১২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ও ২৫১ টন চাল প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া সদর উপজেলার যাত্রাপুরের বিস্তীর্ণ চরে নদী ভাঙনের শিকার ৫০টি পরিবারে ইতোমধ্যে শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন