‘চায়ের রাজধানী’ খ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ঈদের দিন ও এর পরের কয়েক দিন চা-বাগানসহ দর্শনীয় স্থানগুলোতে পর্যটক ও স্থানীয় লোকজনের ভিড় লেগে থাকে। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। বৃষ্টির কারণে ঈদের পরদিন থেকে দর্শনীয় স্থানগুলো প্রায় ফাঁকা।
এমনিতেই এবার পর্যটক কম এসেছেন, তার ওপর সারা দিন বৃষ্টি হওয়ায় পর্যটকেরা হোটেল-রিসোর্ট থেকে বের হতে পারছেন না।
শ্রীমঙ্গলে ঘুরে কিছু পর্যটককে বিকেলে দেখা গেছে। চা-বাগান, বধ্যভূমি, চা কন্যা ভাস্কর্য, বিটিআরআই, সাত রঙের চায়ের দোকান, খাসিয়া পল্লি ও মনিপুরী পাড়াতে সাধারণ ছুটির দিনে যে মানুষ থাকে, তার চেয়েও অনেক কম পর্যটকরে ঘুরতে দেখা যায়।
শ্রীমঙ্গলে চারদিকে সবুজের সমারোহে সজ্জিত সারি সারি চা-বাগানের নয়নাভিরাম দৃশ্য মুগ্ধ করে পর্যটকদের। চা-বাগান ছাড়াও বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই), শিতেষবাবুর চিড়িয়াখানা, বধ্যভূমি-৭১, চা-কন্যা ভাস্কর্যসহ নানা স্থান ঘুরে দেখেন দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা। শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
পর্যটকরা জানান, ঢাকা থেকে অনেক প্ল্যান করে আসছি যে ঘুরব। আমরা সিরিজ ভ্যালি রিসোর্টে গিয়েছিলাম, সেখানে একটা রিসোর্টে আসছি। বৃষ্টির কারণে পুরো দিনটিই নষ্ট হয়ে গেছে। কোথাও ঘুরতে পারিনি। বৃষ্টির মধ্যে রিসোর্টেই আছি। বৃষ্টির জন্য রিসোর্টের ভেতরে পর্যন্ত ঘুরতে পারিনি। বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আসছি ঘুরতে। বধ্যভূমি থেকে ঘুরে লাউয়াছড়া আসছি, এখান থেকে চলে যাব। কয়েকদিন যাবত বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির মধ্যেই এখন বাড়াতে হবে, তাছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই।
শ্রীমঙ্গল বধ্যভূমি একাত্তরে প্রথম বারের মতো আসছি। বৃষ্টির মধ্যে ঘুরতে খারাপ লাগছে না, বেশ ভালোই লাগছে, বৃষ্টিতে ভিজছি, বৃষ্টিকে অনুভব করতে পারছি।
শিতেষবাবুর চিড়িয়াখানা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা দ্বীপ জানান, বৃষ্টিবাদলের জন্য আমাদের এখানে একদমই পর্যটক নাই। গত বছরে ঈদের সময় যে ভিড় ছিল এবার বৃষ্টিবাদলের জন্য একদমই নেই। একদম শূন্যের কোটায় আছে। এমনই অবস্থায় আছি যে আমরা এটার খরচ নিতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে।
বালিশিরা রিসোর্টের ম্যানেজার এমডি আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, শ্রীমঙ্গলে এখন পর্যটক না আসার দুটি কারণে হতে পারে। প্রথমত- এখন আবহাওয়া খারাপ, বৃষ্টি বাদলের জন্য আমাদের সমস্যা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত- সিলেটের বন্যা জন্য মানুষ মনে করছে যে শ্রীমঙ্গলেও হয়তো বন্যা হচ্ছে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টিকেট মাস্টার শাহিন মিয়া বলেন, বৃষ্টির জন্য টুরিস্ট নাই, একদম কম। ঈদের দিনও টুরিস্ট কম ১০০-১৫০ জনের মতো ছিল। ঈদের পরের দিনও সারাদিন বৃষ্টিতে টুরিস্ট কম ছিল। বর্তমানে শূন্যের কোটায় আছে। টুরিস্ট নাই বলতে গেলে।
শ্রীমঙ্গল জোনের ট্যুরিস্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, নানা কারণে তুলনামূলকভাবে এবার পর্যটক অনেক কম। তবে ট্যুরিস্ট পুলিশ জেলার পর্যটন স্পটগুলোতে নিয়মিত টহল দিচ্ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন, সিলেটে বন্যার কারণে হয়তো প্রভাব পড়তে পারে। সিলেটে গাড়িগুলো চলছে না। এটা একটা প্রভাব। দেখুন অনেক রিসোর্টগুলিতে বুকিং রয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসক উর্মি বিনতে সালাম বলছেন, ঈদের দিন ভোর বেলা থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। প্রকৃতির ওপর আমাদের কারো হাত নেই। এই অবস্থায় অনেকেরই আশার ইচ্ছা ছিল, সেটিও বাতিল করেছে। আশা করছি শুক্র-শনিবারে অনেক পর্যটক আসবে।
মন্তব্য করুন