কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের এক আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে ভিজিএফ চাল আত্মসাৎসহ ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্যদের অশ্লীল ভাষায় গালাগাল ও হুমকির অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেছেন চাল বিতরণে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বে থাকা ট্যাগ অফিসার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নবী হোসেন। ঘটনায় জড়িত থাকায় আসামি করা হয়েছে গ্রাম পুলিশের সদস্য সোহাগ মিয়াকেও।
অভিযুক্ত ওই আ.লীগ নেতার নাম আবুল কালাম আজাদ ওরফে তারু। তিনি মাইজখাপন ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি। এ ছাড়াও তিনি মাইজখাপন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিষয়টি জানাজানি হলে মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে চেয়ারম্যান ও গ্রাম পুলিশকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা।
জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আবুল কালাম আজাদ বিগত আড়াই বছর যাবত টিসিবি, ভিজিএফ ও বয়স্ক ভাতা কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম করে আসছেন। এরই মধ্যে গত ১৫ জুন ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ভিজিএফ চাল আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
মামলার তথ্য বলছে, মাইজখাপন ইউনিয়নে ৪ হাজার ৪৪৭ জন ভিজিএফ কার্ডধারীর মধ্যে জনপ্রতি ১০ কেজি করে ৪৪ হাজার ৪৭০ কেজি চাল বিতরণের কথা থাকলেও ১৪ জুন সকাল ৯টা থেকে ১৫ জুন বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২ হাজার ১৬৫ জনের মধ্যে ২১ হাজার ৬৫০কেজি চাল বিতরণ করা হয়। ১৬ জুন সকালে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন অবশিষ্ট ২২ হাজার ৮২০ কেজি চাল থেকে ১ হাজার ৮২০ কেজি চাল সরিয়ে ফেলে। এ ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় লোকজন। দ্রুত চেয়ারম্যান ও তার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
মাইজখাপন ইউনিয়ন পরিষদের নারী সংরক্ষিত ইউপি সদস্য ফাতেমা আক্তার বলেন, একটি ওয়ার্ডের পুরুষ ইউপি সদস্যরা যদি ১০টি কার্ড পায়, আমরা তিনটি ওয়ার্ডে ৩০টি কার্ড পাওয়ার কথা। আমাদের এভাবে সমবণ্টন কখনও দেওয়া হয়নি। আমরা আড়াই বছর যাবত এভাবে ঠকে যাচ্ছি। বর্তমান চেয়ারম্যান বিভিন্ন সময় টিসিবি ও ভিজিএফ কার্ড বিতরণে অনিয়মের কারণে অভিযুক্ত হয়েছে। তারপরও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখেনি।
নারী ইউপি সদস্য মোছা. ময়নার অভিযোগ, আবুল কালাম আজাদ ওরফে তারু বিভিন্ন সময় নারী ইউপি সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। হুমকি দেন। আমাদের আগেও তো অনেক মহিলা ইউপি সদস্য হয়েছে। তাহলে আমাদের কেন এভাবে গালাগাল করা হয়। আমাদেরকে উপজেলা পরিষদে নিয়ে গিয়ে শায়েস্তা করা হবে এমন হুমকি দিয়েছে চেয়ারম্যান। তার নাকি অনেক ক্ষমতা। সে বলে আমি এই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, আমার অনেক ক্ষমতা, আমার উপরে বড় নেতাদের ছায়া আছে। আমার কিছু করতে পারবেন না। তাই আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
ভিজিএফ চাল বিতরণের দায়িত্বে থাকা ট্যাগ অফিসার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নবী হোসেন বলেন, চাল পাচারের সময় স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য দেখে ফেলে আমাকে খবর দেয়। পরে বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি আত্মসাতের কথা জানেন বলে জানান। এবং তার নির্দেশে এমনটা হয়েছে বলেও স্বীকার করেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়ে সরেজমিনে গিয়ে গোডাউনে চালের মজুদ কম দেখে পরবর্তীতে পুলিশে খবর দেই। পরে থানায় মামলা দায়ের করি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ারম্যানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও ফোন রিসিভ হয়নি।
উল্লেখ্য, এর আগেও গত বছরে ঈদুল আজহা উপলক্ষি ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ তারুর বিরুদ্ধে।
মন্তব্য করুন