রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৪, ০৮:১৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য

‘তিনবার জন্ম’ নেওয়া সেই পপির বিরুদ্ধে ইসির তদন্ত কমিটি

ভাইস চেয়ারম্যান হতে তিনবার জন্ম নেওয়া পপি খাতুনের ভিন্ন ভিন্ন ছবি। সংগৃহীত
ভাইস চেয়ারম্যান হতে তিনবার জন্ম নেওয়া পপি খাতুনের ভিন্ন ভিন্ন ছবি। সংগৃহীত

জাতীয় পরিচয়পত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সনদ, পাসপোর্ট, ভোটার তালিকা, ফেসবুক- সবকিছুতেই দেওয়া জন্ম তারিখ অনুযায়ী পপি খাতুনের বয়স ২২ বছর। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনের আগে রাতারাতি তার বয়স বেড়ে হয়ে গেছে ২৬ বছর। পপি খাতুন নির্বাচন কমিশনে (ইসি) যেদিন বয়স সংশোধনের আবেদন করেন, তার পরদিনই বয়স বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

এর দুদিন পর রাজশাহীর পবা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন পপি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। গত ২৯ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পপি বিজয়ীও হন।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আইন অনুযায়ী, ২৫ বছর বয়সের কম কেউ প্রার্থী হতে পারেন না। জন্ম তারিখ সংশোধনের পর ভোটের আগে পপির বয়স বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ বছরে।

গত ১২ জুন কালবেলা পত্রিকায় ‘ভাইস চেয়ারম্যান হতে জন্ম নিলেন ৩ বার’ শিরোনামে এবং দেশের অন্য দুই-একটি অনলাইন পত্রিকায় এই নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। এসব সংবাদের সূত্র ধরে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পপির জাতীয় পরিচয়পত্র কীভাবে সংশোধন হয়েছে তার তদন্ত শুরু করেছে। এ জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

কমিটির আহ্বায়ক নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (প্রবাসী ও নিবন্ধন) মো. আব্দুল মমিন সরকার। কমিটির সদস্যসচিব জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মুদ্রণ ও বিতরণ শাখার উপপরিচালক (চ.দা) এ এস এম ইকবাল হাসান। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সহকারী প্রোগ্রামার (উপাত্ত ব্যবস্থাপনা শাখা) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানকে তদন্ত কমিটির সদস্য রাখা হয়েছে।

বুধবার (১৯ জুন) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পরিচালক (অপারেশনস) মো. ফরহাদ হোসেন এক চিঠিতে এ কমিটি করে দেন। চিঠির অনুলিপি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর ও শাখায় দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বৃহস্পতিবার এ চিঠি হাতে পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। তবে তদন্তের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

কমিটির সদস্যরা এই চিঠি প্রাপ্তির ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত শেষ করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১১ সালে পপি পঞ্চম শ্রেণি পাস করেন। সে সনদে তার জন্ম তারিখ ২০০৩ সালের ১২ জানুয়ারি। ২০১৭ সালে এসএসসি পাস করেন তিনি। এই সনদে তার জন্ম তারিখ ২০০২ সালের ১২ জানুয়ারি। স্কুলের টেবুলেশন শিটেও একই জন্ম তারিখ। চলতি বছর সর্বশেষ ভোটার তালিকাতেও তার জন্ম তারিখ ২০০২ সালের ১২ জানুয়ারি।

তবে নির্বাচনের আগে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে পপি তার সব সনদে জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে ১৯৯৮ সালের ১২ জানুয়ারি করার আবেদন করেন। চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল শিক্ষা বোর্ডের নাম ও বয়স সংশোধন কমিটির সভায় তা পাস হয়। শিক্ষা সনদের বয়স সংশোধনের পর গত ২০ মার্চ জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্ম তারিখ সংশোধনের আবেদন করেন পপি। ৩ এপ্রিল এ আবেদন বাতিল হয়ে যায়। পরে ২৮ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনে আরেকটি আবেদন করেন তিনি। এবার রহস্যজনকভাবে পপির আবেদন গ্রহণ করা হয়। বদলে যায় জন্ম তারিখ। নতুন তারিখ অনুযায়ী, ভোটের দিন তার বয়স ছিল ২৬ বছর ৪ মাস ১৭ দিন। আগের জন্ম তারিখ অনুযায়ী ২৫ বছর পূর্ণ না হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারতেন না তিনি।

জন্ম তারিখ পরিবর্তনের জন্য পপি নির্বাচনে কমিশনে যে কাগজপত্র জমা দিয়েছেন তাতে ভয়াবহ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী, জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজের সঙ্গে নিজের এসএসসি সনদ সংযুক্ত করার কথা। কিন্তু হজরত আলি নামে একজন শিক্ষার্থীর সনদ সংযুক্ত করেছেন পপি। হজরত আলি ২০১৭ সালে নওহাটা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন। হজরত আলির জন্ম তারিখ ২৯ জুন, ২০০১।

অথচ এমন ত্রুটিপূর্ণ আবেদন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় গ্রহণ করে পরদিনই (২৯ এপ্রিল) জাতীয় পরিচয়পত্রটি পরিবর্তন করে দেয়। নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পেয়েই পপি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন গত ২ মে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন জমা দেন। পরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় নির্ধারিত ফরমে প্রার্থীদের সকল তথ্য নির্বাচন কমিশনে পাঠায়। সেখানে পপির ১৭ ডিজিটের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরও আছে। নম্বরটি হলো- ২০০২৮১১৭২৬৫০০০৫৫৯। ১৭ ডিজিটের প্রথম ডিজিট হলো জন্ম তারিখ। সে অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্রেই তার জন্ম সাল ২০০২। সে অনুযায়ী পপির বয়স ২২। তারপরও পপির মনোনয়নপত্র বাতিল করেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা। ভোটে জিতে পপি এখন শপথগ্রহণের অপেক্ষায়।

তবে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর ১৩ জুন পপি খাতুনের বিরুদ্ধে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন পরাজিত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মোসা. চেনবানু। বয়স জালিয়াতি করার অভিযোগ তুলে তিনি পপির প্রার্থিতা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান পপি ছাত্রলীগের কর্মী। ব্যস্ত থাকেন টিকটক আর মিউজিক ভিডিও নিয়ে। প্রভাবশালী অনেকের রাজনৈতিক প্রভাবে পপির এমন উত্থানে হতবাক এলাকার মানুষ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সেন্টমার্টিনে মিয়ানমারের দুই সেনা ও ৩১ রোহিঙ্গা

পদ্মা সেতুর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

ইউরোপ-আমেরিকায় যায় নোয়াখালীর ছানার মিষ্টি

জামালপুরে ৬৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি

ন্যাশনাল স্টিম অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতার ফাইনাল শনিবার

কাজ না করেই প্রকল্পের ১০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন সাবেক ইউএনও

রোদ-বৃষ্টিতে পচে নষ্ট মূল্যবান সরকারি গাছ

মেসিদের কাছে হেরে চাকরি খোয়ালেন ইকুয়েডর কোচ

রাস্তার কারণে বিয়ে হয় না যে এলাকার মেয়েদের

ফের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন

১০

ঝালকাঠিতে অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ উদ্ধার

১১

আবার সিনেমায় পার্থ বড়ুয়া

১২

বাগেরহাটের বাজারে বেড়েছে মাছ ও সবজির দাম

১৩

ভিনিসিয়ুসের ভূমিকা নিয়ে রোমারিওর প্রশ্ন

১৪

‘ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চলছে’

১৫

বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপরে যমুনার পানি

১৬

স্কুল ব্যাগে বই নয়, মিলল গাঁজা

১৭

সরকারের শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে ৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা দিল ওয়ালটন

১৮

বক্স অফিসে চলছে ‘কল্কি ২৮৯৮ এডি’র তাণ্ডব

১৯

কুমিল্লায় তরুণীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

২০
X