উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতে তিস্তা নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তা কাউনিয়া পয়েন্টে বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সন্ধ্যা ৬টা থেকে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আর তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। যে কোনো মুহূর্তে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
পানি বৃদ্ধিতে লালমনিরহাট জেলার পাঁচ উপজেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তলিয়ে গেছে স্কুল মাঠ। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে রেখেছেন কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার মাত্র ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সকাল ৯টায় একই পয়েন্টে পানি কিছুটা কমে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচে, দুপুর ১২টায় ২০ সেন্টিমিটার এবং বিকেল ৩টা থেকে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু ওই পয়েন্টে পানি আবারও বৃদ্ধি পেয়ে সন্ধ্যা ৬টা থেকে বিপৎসীমার মাত্র ২০ নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার।
এদিকে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের কয়েকশ’ পরিবার গত তিনদিন থেকে পানিবন্দি রয়েছে। তলিয়ে গেছে চলাচলের রাস্তা। তারা গরু-ছাগলসহ গৃহপালিত অন্যান্য পশুপাখি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ঘরে পানি ওঠায় রান্না করতে পারছে না। ফলে তাদের শুকনো খাবারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তবে এখনো সরকারি ব্যবস্থাপনায় পানিবন্দি মানুষদের শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়নি বলে জানিয়েছে পানিবন্দি মানুষজন। তিস্তা নদী তীরবর্তী বাগডোরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর গোবর্ধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিদ্যালয় মাঠে এখন হাঁটু সমান পানি। তলিয়ে গেছে কমিউনিটি ক্লিনিক ও মসজিদ।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাশেদীন ইসলাম জানান, ভারতের সিকিমে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টিপাতের কারণে সেখানে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। সেই পানি তিস্তায় প্রবেশ করে নদী তীরবর্তী কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে তিস্তায় পানি বৃদ্ধিতে লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়ন, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ইউনিয়ন, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি ইউনিয়ন, হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ি এবং পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী চরের বাদাম ক্ষেত, ধান বীজতলা, মিষ্টি কুমড়াসহ অন্যান্য ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে।
তিস্তা নদী সংলগ্ন সদর উপজেলার আনন্দ বাজার এলাকার কৃষক জয়নাল আবেদীন বলেন, বৃহস্পতিবার ভোর রাত থেকে পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে নদী তীরবর্তী অনেক ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মানুষজন। উঁচু স্থানে চুলা জ্বালিয়ে রান্নার কাজ সেরে নিচ্ছেন মানুষজন।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার রায় জানান, ভারতের সিকিমে বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। মূলত উজানের পানিতেই তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উজান থেকে আরও ব্যাপকহারে তিস্তা নদীতে পানি প্রবেশ করলে আমাদের বাংলাদেশ অংশের তিস্তা নদী তীরবর্তী পুরো অঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
মন্তব্য করুন