বগুড়ার ধুনট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ভোট নিয়ে সামাজিক বিরোধের জের ধরে দরিদ্র ২৮টি পরিবারের লোকজন কোরবানির মাংস থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ ঘটনায় বঞ্চিত পরিবারের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গত সোমবার (১৭ জুন) ঈদের দিন উপজেলা সদরের পারধুনট গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ জুন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ভোট নিয়ে পারধুনট গ্রামে সমাজের মাতবরদের একটি অংশের মাঝে বিরোধের সৃষ্টি হয়। ওই সমাজে মোট পরিবারের সংখ্যা ৩৫০টি। সমাজের নিয়ম অনুযায়ী ঈদের দিন প্রতিটি পরিবার একই স্থানে পশু জবাই করে। সেখান থেকে কোরবানিদাতা নিজের ও আত্মীয়র অংশের মাংস বাড়িতে নিয়ে যান। আর অবশিষ্ট মাংস গরিব পরিবারের মাঝে সমহারে বণ্টন করা হয়।
অন্যান্য বছরের ন্যায় এবার ঈদের দিন ৩৫০টি পরিবারের ওই সমাজে ৮টি গরু ও ২৫টি ছাগল একই স্থানে জবাই করা হয়। হিসাব অনুযায়ী প্রতিটি গরিব পরিবারের প্রত্যেক সদস্যর জন্য ৮০০ গ্রাম করে মাংস পাওয়ার কথা। কিন্তু সমাজের দায়িত্ব থাকা ব্যক্তিরা কৌশলে অনেকে পরিবারকে ১ কেজি ১০০ গ্রাম করে মাংস দিয়েছে। এ কারণে দেওয়া সম্পন্ন হওয়ার আগে মাংস শেষ হয়ে যাওয়ায় ২৮টি পরিবার তাদের অংশের মাংস পাননি।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই গ্রামে গেলে কোরবানির মাংস থেকে বঞ্চিত আব্দুল আজিজ, রওশনারা খাতুন, আফছার আলী, রোকেয়া খাতুন ও হাসিনা বেগমসহ অনেকে জানান, কোরবানির মাংস না পাওয়ায় তাদের ঈদের আনন্দই মাটি হয়ে গেছে। তারা ঈদের দিন কোরবানির মাংস খেতে পারিনি। ভাগে মাংস কম পড়ায় সমাজের মাতবরা তাদের মাংস দেননি। এ ধরনের ঘটনা এর আগে কোনো দিন ঘটেনি। মাতবররা কৌশলে তাদের মাংস থেকে বঞ্চিত করেছেন বলে তারা দাবি করেন।
পারধুনট গ্রামের মাতব্বর সাবেক ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। অভাব অনটনের কারণে অনেক পরিবারের লোকজন প্রতি বছর একবারই (ঈদের দিন) মাংস খেয়ে থাকেন। গরিব-অসহায় পরিবারগুলো মাংস না পেয়ে অনেক আক্ষেপ করেছেন। গ্রামের মাতবরদের মতবিরোধের কারণে পরিবারগুলো মাংস থেকে বঞ্চিত হয়। আমি চেষ্টা করেও কয়েকজন মাতবরের কারণে তাদের মাংস দিতে পারিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের এক মাতবর জানান, উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ভোট নিয়ে মাতবরদের মাঝে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এ কারণে ২৮টি পরিবার কোরবানির মাংস পাননি। মূলত মাতবরদের বিরোধের বলি হয়েছেন অসহায় এসব পরিবারগুলো।
ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈকত হাসান বলেন, এ বিষয়টি আমি লোকমুখে শুনেছি। এ ঘটনায় কেউ এখন পর্যন্ত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন