মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার আলী হাওলাদার (৩০) নামে এক যুবকের ভূমধ্যসাগরে মৃত্যু হয়েছে। লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ট্রলার ডুবে তার মৃত্যু হয়।
মাদারীপুর এলাকার এক দালালের মাধ্যমে ১৬ লাখ টাকা চুক্তিতে গত মাসে প্রথমে লিবিয়া পৌঁছান। ওই ১৬ লাখেই ইতালি পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। পৌঁছানোর পর হাত বদল হয়ে মাফিয়াদের হাতে বন্দি হয় আলী।
শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আরও ১১ লাখ টাকা দিতে হয় দালালের হাতে। এরই মাঝে একবার সাগরপথে রওনা হন আলী। ব্যর্থ হয়ে আবার অপেক্ষা করেন গেম ঘরে। এরপর সোমবার (১৭ জুন) রাতে সাগর পথে ইতালির উদ্দেশে রওনা হয় আলীসহ আরও অনেকে।
ট্রলারের ইঞ্জিন বিস্ফোরণ হয়ে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটলে মারা যান শিবচরের আলী হাওলাদার। নিহত আলী হাওলাদার মাদারীপুর জেলার শিবচর পৌরসভার খানকান্দি এলাকার ইউনুস হাওলাদারের ছেলে।
বুধবার (১৯ জুন) বিকেলে উপজেলার ভান্ডারিকান্দি নিহতের শ্বশুর গোলাম মোস্তফা মাতুব্বরের বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজনের আহাজারি। ছয় বছর বয়সী অবুঝ সন্তান রাব্বী ও এক বছর বয়সী রাবেয়া এখনও বুঝে উঠতে পারেনি তার বাবা আর নেই।
নিহত আলী হাওলাদারের মামা শ্বশুর আব্দুস সালাম উকিল বলেন, সোমবার রাতে সাগরে আলী মারা যায়। আমরা মঙ্গলবার (১৮ জুন) রাতে ওর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হই। আলীদের পরিবার দরিদ্র। আমার ভাগনির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থেকে ওদের বিয়ে হয়। এরপর আলী ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালাতেন। বেশ ভালোই ছিল। আরেকটু সচ্ছলতার জন্য বিদেশ যেতে চায়। পরে শ্বশুরবাড়ি থেকেই টাকা-পয়সা সংগ্রহ করে দালালের মাধ্যমে বিদেশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে সাগরে ডুবে ও মারা যায়। ওর পরিবারের সব স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো।
বিপ্লব নামে নিহতের এক আত্মীয় বলেন, দুই দফায় ২৭ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। সোমবার রাতে যখন রওনা হয় তখন আলীসহ অন্যরা বোটের নিচে ইঞ্জিনরুমের কাছাকাছি ছিল। রওনা দেওয়ার আগে বাড়িতে শেষ কথা হয়। আমরা শুনেছি ইঞ্জিন ব্লাস্ট হয়ে ওদের মৃত্যু হয়েছে। ওর সঙ্গে মাদারীপুরের আরও দুইজন ছিল। তারাও মারা গেছে।
নিহত আলী হাওলাদারের স্ত্রী রোমেনা আক্তার বলেন, দেশে থাকালীন ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালাতেন আলী। সবাইকে ভালো রাখতে ইতালি যাবেন বলে বের হয়েছিলো। এভাবে মৃত্যু হবে মেনে নিতে পারছি না। আমার ৬ বছরের এক ছেলে ও এক বছরের এক মেয়ে রয়েছে।
নিহত আলীর বাবা ইউনুস হাওলাদার জানান, আমার ছেলে আর নাই। ছেলের মুখ আর দেখতে পাইলাম না। বিদেশ যাইয়া অনেক টাকা কামাই করবে। এই আশায় মরণপথে গেল।
শিবচরের ইউএনও মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে মারা যাওয়া শিবচরের একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে মাদারীপুর জেলার তিনজন রয়েছে। এদের মধ্যে শিবচরের আরও একজন থাকতে পারে।
মন্তব্য করুন