ক্রমাগত ভারি বর্ষণ ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে পানিবন্দি হাজারো মানুষ। সোনাই নদীর বাঁধ ভেঙে বিশেষ করে হরিশ্যামার মরাচর পয়েন্টেসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাড়িতে বন্যার পানি উঠেছে। টানা বিরামহীন এ বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়েছে জনজীবন। ভেসে যাচ্ছে পুকুরের মাছ, নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতের ফসলসহ ঘরবাড়ি। স্থানীয় কাশিমনগরের রাবার ড্রামের দু'পাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে গেছে গুরুত্বপূর্ণ অনেক জরুরি রাস্তাও।
হরিশ্যামা, বহরা, চৌমুহনী, ধর্মঘর, মনতলা বিজিবি ক্যাম্প, ফায়ার সার্ভিস এলাকা, শাহজাহানপুরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা ও বাসাবাড়িতেও পানি উঠেছে। অতিবৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা থাকায় পানির কারণে বাড়ছে সব নদনদী ও খালের পানি। মাধবপুর পৌরশহরের মানুষও কিছু পানিবন্দি হয়েছে।
বুধবার (১৯ জুন) বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নদী ও খাল দখল করে ভবন ও স্থাপনা নির্মাণ করার কারণে পানিপ্রবাহ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ভারি বর্ষণের ফলে এ অস্থায়ী বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত থেকেই বসতভিটায় বন্যার পানি ওঠে যাওয়ায় পরিবার, পরিজন ও গৃহপালিত পশু নিয়ে এদিক-ওদিক ছুটছেন শ্রমজীবী মানুষজন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলার সড়কগুলো একের পর এক ডুবে গেছে।
প্লাবিত এসব এলাকায় খাবার পানি, গোখাদ্যসহ নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ায় দুর্গত এলাকার লোকজন কষ্ট করে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন।
বানভাসি মানুষজন জানান, সোমবারের চেয়ে বুধবার পরিস্থিতি আরও খারাপ। কবলিত হচ্ছে নতুন নতুন সড়ক ও বাসাবাড়ি। রান্নাঘর ও শৌচাগার ডুবে যাওয়া মানবেতর জীবনযাপন করছেন বন্যার্ত এলাকার নারী শিশুসহ পরিবারের বয়স্ক সদস্যরা। শুকনো খাবার ও ত্রাণ সহায়তা প্রার্থনা করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজন।
স্থানীয় বহরা ইউপির সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, পুরো মাধবপুর পানিতে ভাসছে। আমার ঘরে হাঁটুর ওপরে পানি। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। মানুষ অনেক কষ্টে আছে। সরকারি বেসরকারি সহযোগিতা না পেলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে জানান তিনি। আমার এলাকার একটি বাচ্চাও নিখোঁজ রয়েছে।
মাধবপুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের মো. জহির বলেন, এই এলাকার বেশির ভাগ খাল দীর্ঘদিন ধরে খনন করা হয়নি, তাই অল্প বৃষ্টিতে বাসাবাড়িতে পানি উঠে যায়। তাছাড়া ড্রেনের অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা চাই অচিরেই এর একটা ব্যবস্থা নেবে সরকার। বারবার আমরা এ ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। ভোটের সময় আসলে আমাদেরকে জনপ্রতিনিধিরা অনেক আশার বাণী শোনায়। নির্বাচন শেষে তাদের আশার বাণীও শেষ।
এদিকে দুদিনের ভারি বর্ষণে উজান থেকে নেমে পাহাড়ি ঢলে আসা সোনাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীর পাড় প্লাবিত হয়ে বহু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবার খবর পাওয়া গেছে। আন্দিউড়া ইউনিয়নের হরিশ্যামা মরারচর এলাকায় নদীর পাড় ভেঙে বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। কৃষকের সবজি, রোপা আমন, পাট ক্ষেতে বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। খবর পেয়ে বুধবার সকালে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
মাধবপুরের ইউএনও একেএম ফয়সাল জানান, গত দুদিনে সিলেট বিভাগে অবিরাম ভারি বর্ষণে সোনাই নদীর পানি বেড়ে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিয়ষটি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় ভুক্তভোগী মানুষ জরুরি সাহায্য ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা মেরামতের জন্য প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন ও কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে।
মন্তব্য করুন