মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৪, ০৬:১৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে দেড় সহস্রাধিক রোহিঙ্গা পরিবার

কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ধস। ছবি : কালবেলা
কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ধস। ছবি : কালবেলা

তীব্র গরমের পরে সবেমাত্র শুরু হয়েছে বর্ষাকাল। আষাঢ় মাসের ৫ তারিখ বুধবার মধ্যরাত থেকে হঠাৎ শুরু হওয়া ভারি বৃষ্টিতে কক্সবাজারের অনেক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এরই মধ্যে পাহাড়ধসে ৯ রোহিঙ্গাসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পাহাড়ের ঝুঁকিতে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের মাঝে আতংক দেখা দিয়েছে। টানা বর্ষা শুরু হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা হতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তারা। আবহাওয়া অফিস বলছে আরও কয়েকদিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। আর শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন অফিস বলছে ঝুঁকিতে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে কাজ করছে তারা।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান বলেন, বুধবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া ভারি বৃষ্টিপাত দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। আরও কয়েকদিন বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানান তিনি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামসুদ্দৌজা নয়ন বলেন, বুধবার ভোর আনুমানিক সাড়ে ৩টা থেকে পৌনে ভোর ৬টার মধ্যে বিভিন্ন ক্যাম্পে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষার্থীসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে নয়জন রোহিঙ্গা। যেখানে ক্যাম্প-৯ এর আই/৪ ব্লকে দুজন, আই /৯ ব্লকে একজন, ক্যাম্প-১০ এর এফ/১০ ব্লকে ৪ জন, ক্যাম্প-৮ বি/৮২ ব্লকে এক শিশু, ক্যাম্প-১ এর এফ/৫ ব্লকে এক নারী এবং ক্যাম্প-১৪ এর পার্শ্ববর্তী স্থানীয় এক শিক্ষার্থী।

পাহাড়ধসে নিহতরা হলেন, ৯ নম্বর ক্যাম্পে নিহতরা হলেন, ব্লক ১০ এর আবুল কালামের ছেলে আবু মেহের (২৫), লাল মিয়ার ছেলে আবুল কালাম (৫৭), মতিউর রহমানের মেয়ে সলিমা খাতুন (৪২), শরিফ হোসেনের মেয়ে জয়নব বিবি (১৯), ৯ নম্বর ক্যাম্পে নিহতরা হলেন, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেরানীহাট এলাকার আলী জহুরের ছেলে মো. হোসেন আহমেদ (৫০), ওই ক্যাম্পের আই ৪ ব্লকের আলী জোহারের মেয়ে আনোয়ারা বেগম (১৮) ও আই ৯ ব্লকের মো.জামালের ছেলে মো. সালমান (৩)। ৮ নম্বর ক্যাম্পে নিহত হন, বি-৮২ ব্লকের মো. হারেজের ছেলে মো. হারেজ (৪)। ১৪ নম্বর ক্যাম্পে নিহত হন উখিয়ার থাইংখালী এলাকার শাহ আলমের ছেলে আব্দুল করিম (১২)। আবদুল করিম থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। ১ নম্বর ক্যাম্পে নিহত হন, এফ/৫ ব্লকের সুলতান আহমদের মেয়ে পুতনী বেগম (৩৪)।

জানা যায়, ২০১৭ সালে আগস্ট মাসের শেষ দিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যচার, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ থেকে রক্ষা পেতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন প্রায় ১২লাখ রোহিঙ্গা। বাস্তুচ্যুত হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের উখিয়া এবং টেকনাফ পাহাড়ের পাদদেশ থেকে শুরু করে পাহাড় কেটে থরে থরে ঝুপড়ি ঘর করে দেওয়া হয়। ফলে বর্ষা আসলেই পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসবাস করা রোহিঙ্গারা পাহাড়ধসের আতংকে থাকেন। বুধবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। টানা বর্ষণ হলে বাঁশ ও পলিথিনে তৈরি ঝুপড়ি অনেক ঘর বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

৯নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা আব্দুস ছাত্তার বলেন, টানা বৃষ্টি হলে রোহিঙ্গা শিবিরে দুর্ভোগ বাড়ে। গ্রীষ্মকালে রোদে টেম্পার নষ্ট হওয়া ত্রিপলের নষ্ট হয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে। শত শত পরিবার এ দুর্ভোগে মোকাবিলা করে।

৮নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রহমত উল্লাহ বলেন, গেল বছরও আমরা দুর্ভোগে পড়েছিলাম। এবার তো বর্ষার শুরুতেই ১০ জনের করুণ মৃত্যু হয়েছে। এখন আমরা আতংকে পড়েছি। এরচেয়ে বড় দুর্ঘটনা হতে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। কিন্তু আমরা কোথায় যাব। আমাদের তো যাওয়ার কোনো স্থান নেই।

উখিয়া ইউএনও তানভীর হোসেন ও টেকনাফ ইউএনও মো. আদনান চৌধুরী বলেন, যে কোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন তারা।

তবে এ দুর্ঘটনার জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য কমে আসাকে দায়ী করেছেন কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, ছোট জায়গায় বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে। শুরু থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থাগুলো সহযোগিতা করে আসলেও এখন আন্তর্জাতিকভাবে সাহায্য কমেছে। ফলে রোহিঙ্গাদের ঘরগুলো সংস্কার করা যায়নি। যার ফলে হঠাৎ ভারি বৃষ্টিতে পাহাড়ধসে এ দুর্ঘটনা ঘটে। অথচ এ ঘরগুলো আমরা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকা করেছিলাম কয়েক বছর আগে।

তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অন্যদেরও সরিয়ে নেওয়া হবে। যেহেতু ঝুঁকিতে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের তালিকা আমাদের হাতে রয়েছে সেহেতু আমরা দ্রুত তাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে পারব। কিন্তু আন্তর্জাতিক সাহায্য ছাড়া এটি আসলে কোনোভাবে ওভারকাম করা সম্ভব হবে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ক্রীড়াবিদ শওকত আলীর স্মরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল

শাহরিয়ার কবির আটক

সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

রাসূল (স.) আদর্শ ধারণ করে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে

ঝিনাইদহে নাশকতা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী সুজনের গ্রেপ্তারের খবরে বিএনপির আনন্দ মিছিল

মানিকগঞ্জে ধলেশ্বরী নদী থেকে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার

ভূমি উপদেষ্টার পরিদর্শন, হয়রানি ছাড়া নামজারি খতিয়ান পেয়ে উৎফুল্ল নাজিম  

চট্টগ্রামে জশনে জুলুশে মানুষের ঢল  

বন্যা পরবর্তী প্রাণী চিকিৎসায় বাকৃবি শিক্ষার্থীরা

১০

‘দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তির জন্য রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে’

১১

নার্সের ভুলে ৩ দিনের শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ

১২

‘স্মরণকালের সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ’ করার প্রস্তুতি বিএনপির

১৩

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত

১৪

রাত ১টার মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

১৫

সিরাজগঞ্জে কবরস্থানে মিলল অস্ত্র ও গুলি

১৬

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে জামায়াতের নায়েবে আমিরের মতবিনিময়

১৭

২৮ থেকে ৪২তম বিসিএসের বঞ্চিত সেই ক্যাডাররা ফের বঞ্চনার শিকার

১৮

তিন বিভাগে ভারি বৃষ্টির আভাস

১৯

আমার কষ্ট নেই, আজ আমরা স্বৈরাচারমুক্ত : আহত তানভীরের পিতা

২০
X