রফিকুল ইসলাম, রংপুর
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৪, ০২:২৪ পিএম
আপডেট : ১৯ জুন ২০২৪, ০২:২৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সিন্ডিকেটের ফাঁদে কমছে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম

পশুর চামড়া। ছবি : সংগৃহীত
পশুর চামড়া। ছবি : সংগৃহীত

এবারও সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে চামড়ার দাম। সরকার নির্ধারিত ন্যায্য দাম পাননি কেউ। হাতেগোনা কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা সামান্য লাভের মুখ দেখলেও কোরবানির চামড়ায় দায় সারা দরে কিনতে সব আয়োজন করেছেন বড় বড় ব্যবসায়ীরা।

ফলে গতবারের চেয়ে এবার প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ঢাকায় ৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৭ টাকা বাড়ানো হলেও কাঙ্ক্ষিত দাম পাননি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

বুধবার (১৯ জুন) সরেজমিনে চামড়া কেনাবেচার স্থানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, সরকার নির্ধারিত লবণযুক্ত চামড়ার দামের অর্ধেক দামেও চামড়া বিক্রি করতে না পেরে লোকসানে হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর এ রকম সিন্ডিকেটের ফাঁদে রংপুরে একদিকে কমছে কোরবানির পশুর চামড়ার আমদানি। অন্যদিকে ন্যায্য দাম না পেয়ে চামড়া মাটিচাপা দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

এদিকে, সরকারের বেঁধে দেওয়া চামড়া দাম নির্ধারণ শুধুই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকায় ‘সিন্ডিকেট’ বলয় এবারও ভাঙতে পারেননি সাধারণ ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা।

রংপুর নগরীর চামড়া কেনাবেচার সবচেয়ে বৃহৎ এলাকা চামড়াপট্টিতে দেখা গেছে, পুরো চামড়ার বাজার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে নেন আড়তদারসহ বড় বড় ব্যবসায়ীরা। তারা সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে তাদের বেঁধে দেওয়া দামের বাইরে চামড়া বিক্রি হয়নি।

এদিকে সাধারণ মানুষ এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চামড়ার জন্য প্রসিদ্ধ রংপুর নগরীর শাপলা চত্বর টার্মিনাল রোডের চামড়াপট্টি এলাকার ব্যবসায়ীরাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে এবারও সস্তায় চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। গরুর চামড়ায় দাম মিললেও ছাগলের চামড়া ফ্রি-তে দিতে হয়েছে। চামড়ার দাম কম দিতে নানা অজুহাতের ফাঁদ গল্প শুনতে হয়েছে তাদের।

নগরীর বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়, এবার প্রতি পিস গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ৬০০ টাকায়। আর ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫ থেকে ১০ টাকায়। মৌসুমি চামড়া বিক্রেতারা জানিয়েছে, বিভিন্ন জায়গা থেকে চামড়া কিনে আনার পর আড়তদারদের কাছে চামড়ার ন্যায্য দাম পাওয়া যায়নি। এতে করে হতাশ তারা।

রাশেদুন্নবী জুয়েল নামের একজন জানান, তাদের গরুর দাম ছিল ১ লাখ বিশ হাজার টাকা। কিন্তু সেই গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন মাত্র ৪০০ টাকায়।

তিনি বলেন, প্রায় চার ঘণ্টা ছিলাম। কোনো ক্রেতাই এর থেকে দাম বেশি বলেনি। উপায় না থাকায় কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। এতে করে আমার ক্ষতি না হলেও সাধারণ গরীব-মিসকিনেরতো ঠিকই ক্ষতি হচ্ছে। কারণ কোরবানির পশুর চামড়ার টাকায় তো তাদের হক রয়েছে।

প্রায় একই কথা বলেন হাশেম আলী, নজরুল ইসলাম, আলতাফ হোসেন, মনোয়ার হোসেন ও কামরুল ইসলামসহ অনেকে।

চামড়া নিয়ে আসা মৌসুমি ব্যবসায়ী খায়রুল ইসলাম জানান, প্রতি বর্গফুট মাঝারি গরুর চামড়া সর্বনিম্ন ৭০০ থেকে ৮০০ এবং বড় গরুর চামড়া এক হাজার থেকে বারো’শ দাম হওয়ার কথা। তিনি ওই হিসেবে গড়ে ৬০০ টাকা দরে চামড়া কিনেছেন। গাড়ি ভাড়া আনুষঙ্গিক খরচসহ সাড়ে ৬০০ টাকা পড়েছে প্রতি পিস চামড়া কিনতে। কিন্তু আড়তদাররা ৫০০ টাকার বেশি দামে চামড়া কিনতে রাজি না হওয়ায় তাকে মোটা অঙ্কের লোকসান মেনে নিতে হয়েছে।

একই কথা জানিয়েছেন নগরীর সিও বাজার এলাকার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী সোলায়মান আলী। তিনিও গড়ে ৬০০ টাকা দরে চামড়া কিনে এনে সস্তা দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন।

তবে আড়তদারদের দাবি, ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা টাকা তুলতে না পারা, পুঁজি সংকটসহ লবণের দাম বৃদ্ধি ও বিভিন্ন কারণে সরকার নির্ধারিত দামে তারা চামড়া কিনতে পারেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর ১৫-২০ জন ফড়িয়া ও অর্ধশত মৌসুমি ব্যবসায়ী এবং হাতেগোনা ৬-১০ জন ব্যবসায়ী চামড়া কিনলেও এ বছর বেশির ভাগকেই চামড়া কেনাবেচায় দেখা যায়নি। সবমিলিয়ে চার-পাঁচজন ছাড়া চামড়া কেনার মতো বড় কোনো ব্যবসায়ী ও আড়তদার ছিল না এ এলাকায়। অথচ এক সময় চামড়াপট্টি এলাকায় শতাধিকের বেশি চামড়ার গুদাম ছিল।

রংপুর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আফজাল হোসেন বলেন, সিন্ডিকেট করে কী লাভ? এমনিতেই চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। ট্যানারি ছাড়া স্থানীয়ভাবে চামড়া সংরক্ষণের বিকল্প কোনো উপায় নেই। এখন আমদানিও কম। লবণের দাম তো বেড়েই চলেছে। এত কিছুর মাঝেও ট্যানারি মালিকেরা সরকারের কাছ থেকে ঋণ পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের মতো ব্যবসায়ীরা বছরের পর বছর ধরে ঋণ সুবিধার বাইরে রয়েছি। আমাদের ঋণ দেওয়া হয় না। অথচ বড় বড় ট্যানারি মালিকেরা চামড়া ব্যবসার নামে ঋণ নিয়ে তা অন্যখাতে বিনিয়োগ করছে।

তিনি আরও বলেন, চামড়া কিনে কোথায় বিক্রি করা হবে, এ নিয়েই চিন্তিত বড় ব্যবসায়ীরা। এখন চামড়ার দাম নেই। তার মধ্যে আর্থিকভাবে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মিছিলে বিএনপি নেতার গুলির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

রৌমারীতে ব্যবসায়ীদের আহ্বায়ক কমিটির শপথ অনুষ্ঠিত

৬৫ ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয়ায় মামুনের বিরুদ্ধে যুবদলের মামলা

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

ক্ষমা পেয়ে আমিরাত থেকে ১২ জন ফিরছেন চট্টগ্রামে

‘ছাত্র জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকার দুই ভাবে পরাজিত’

মহানবীকে (সা.) কটূক্তিকারী সেই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা

শিবচর আঞ্চলিক সড়কে গ্রামবাসীর বৃক্ষরোপণ

মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকার চেষ্টার অভিযোগ ধামাচাপা, ৭ দিন পর ফাঁস

১২ দিনেও মেলেনি রানীনগরে নিখোঁজ নার্গিসের সন্ধান

১০

দায়িত্বশীলদের নিয়ে সাতক্ষীরায় ছাত্র শিবিরের সমাবেশ

১১

আযহারী শিক্ষার্থীরা হবে বাংলাদেশ ও মিশরীয় ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন : মিশরীয় রাষ্ট্রদূত

১২

রাজশাহীতে বস্তাভর্তি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার

১৩

আন্দোলনের ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ কর্মীকে গণধোলাই

১৪

আশুলিয়ায় গার্মেন্টস শ্রমিক অসন্তোষ ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে শ্রমিক সমাবেশ

১৫

কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

১৬

পাকিস্তানের জলসীমায় বিপুল তেল-গ্যাস মজুতের সন্ধান

১৭

বিসিবির দুর্নীতির তদন্ত দাবি সাবেকদের

১৮

পাবিপ্রবি ছাত্রলীগ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

১৯

জেল খেটেছি তবু শেখ হাসিনার মতো পালিয়ে যাইনি : সাবেক এমপি হাবিব

২০
X