সুনামগঞ্জে নদীর পানি কমলেও হাওর অঞ্চল ও পৌর শহরের পাড়া-মহল্লায় বাড়ছে। মঙ্গলবার সকালে সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার বা ২.২৩ ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
বুধবার (১৯ জুন) সুরমা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে ৪০ সেমি উপর দিয়ে। মঙ্গলবার রাতে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও তেমন বৃষ্টি হয়নি। তবে ভোর থেকে একটানা বৃষ্টি পাত হচ্ছে। এতে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নতুন পাড়া, শান্তিবগা, ধোপাখালী, বাঁধনপাড়া, বলাকা, মোহাম্মদপুর, ষোলঘর, নবীনগর, কাজীর পয়েন্টসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি বেড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, একতলা বা কাঁচা ঘরে থাকা মানুষজন নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন। গতকাল রাত থেকেই অনেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। সবার চোখে মুখে ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার আতঙ্ক। তবে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন। ঝাওয়ার হাওরের পাশে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষের ঘরের চাল ছুঁই ছুঁই পানি। পরিবার পরিজন নিয়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন তারা।
এদিকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।
ঝাওয়ার হাওর পাড়ের সবুজ দাস জানান, দুই দিন আগেই আমার ঘরে পানি উঠেছে। প্রথম কাজে বের হতে পারিনি। দ্বিতীয় দিন রিকশা নিয়ে বের হলেও তেমন রুজি রোজগার হয়নি। মঙ্গলবার রাতেই প্রাণ বাঁচাতে পরিবার নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে গেছি। আজ এসে দেখি আমার ঘরের প্রায় চাল সমান পানি। এভাবে চলতে থাকলে আমার মতো মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকবে না।
নৃপেশ চক্রবর্তী বলেন, গতবারের বন্যায় (২০২২) ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারিনি। গলা পানি ভেঙে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। শুনেছি পানি আরও বাড়তে পারে। তাই এবার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আগেভাগেই আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে উঠেছি। শুধু আমি নই একতলার বাসিন্দা সবাই চেষ্টা করছেন নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার।
পাহাড়ি ঢল নেমে আগে থেকেই প্লাবিত ছিল সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, মধ্যনগর, দিরাই, শাল্লা, জামালগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছাতক দোয়ারাবাজার, সদর উপজেলা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, পানি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সেমি বা ১.৩১ ফিট উপর দিয়ে সুরমা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতক উপজেলায় বিপৎসীমার ১৪৬ সেমি বা ৪.৭৯ ফিট উপর দিয়ে সুরমা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও দিরাই উপজেলায় ১৬ সেমি বা ৬.৩০ ইঞ্চি উপর দিয়ে সুরমা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১০০ মিমি, লাউড়ের গড়ে ৭৮ মিমি, ছাতকে ৮৪ মিমি এবং দিরাইয়ে ৭৭ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নদীর পানি কমলেও বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পানি বাড়তে পারে। বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, গত কয়েকদিন ধরে সুনামগঞ্জ জেলায় ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে সুনামগঞ্জের কিছু পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বিশেষ করে ছাতক, সুনামগঞ্জ ও বিশ্বম্ভরপুর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে। শহরের কিছু জায়গা প্লাবিত হয়েছে। জেলায় আমরা ৫১৬টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছি। যাদের প্রয়োজন তারা আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রিতদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ছাতক, দোয়ারাবাজার, সদর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এ ছাড়াও বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মন্তব্য করুন