চলনবিল বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি বৃহৎ বিল। নাম শুনলেই গা ছমছম করে ওঠে। থইথই জলে উথালপাতাল ঢেউ। তবে এবার বর্ষা মাসের শুরুতে নেই চলনবিলে পানি। তবুও যতটুকু পানি আছে সেই পানিতেই নৌকায় মাইক, সাউন্ড বক্স নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তরুণ যুবকেরা।
সারাদিনের ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা করে পবিত্র ঈদুল আজহার আনন্দ উদ্যাপন করতে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে গত দুদিন থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের উপচে পড়া ভিড় বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনের ফাঁকে পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দে মেতেছেন সবাই।
মঙ্গলবার (১৮ জুন) সরেজমিনে উপজেলার হাটিকুমরুল-বনপাড়া সড়কে অবস্থিত ৯ ও ১০ নং ব্রিজ, সগুনা ইউনিয়নের কুন্দইল ব্রিজ, মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের লাভ ব্রিজ ও তাড়াশ পৌর শহরে অবস্থিত শিশু পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্রে সব বয়সের নারী-পুরুষ ও শিশুদের সরগরম উপস্থিতি।
বিশেষ করে শিশু, কিশোর, কিশোরী ও তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সী লোকজন ছুটে আসে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে। বর্ষা মৌসুমে চলনবিলে মনোরম পরিবেশ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঈদের আনন্দ সপরিবার নিয়ে উপভোগ করেছে সবাই।
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা ফারজানা খাতুন, আশরাফুল ইসলাম, লালন এক্কা, জাহানারা চৌধুরি, আফসানা খাতুন মিম, রোকসানা খাতুন, তুলি সরকার বলেন, গত তিন বছর হলো ঈদে আমরা এখানে ঘুরতে আসছি। আমরা এখানে এসে খুবই এনজয় করেছি।
বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার শিমুলদিয়া গ্রাম থেকে প্রথমবারের মতো বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে এসেছেন মাসুম সরকার। তিনি জানান, চলনবিলে এবার পানি না থাকলেও বিভিন্ন বড় বড় ব্রিজের দুই পাশে সুন্দর পরিবেশ দেখে মুগ্ধ। প্রাকৃতিক বাতাসে বসে থাকতে বেশ আনন্দ পেয়েছেন। আবারও পরিবার নিয়ে আসবেন।
মাগুড়া গ্রাম থেকে নাজনীন নাহার সপরিবারে ব্রিজে ঘুরতে যান। তিনি জানান, ভ্যাপসা গরমে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে প্রাকৃতিক বাতাস উপভোগ করতে এ ব্রিজে এসেছেন। লোক সমাগম প্রচুর। তবুও ভালো লাগছে।
দর্শনার্থীরা আরও জানান, তাড়াশ উপজেলার নানা প্রান্ত থেকে এখানে সহজে আসা যাওয়া করা যায়। ঈদের পরদিন দাবদাহ কিছুটা বেশি থাকায় দুপুরের দিকে ঘুরতে ঘুরতে হাপিয়ে উঠে দর্শনার্থীরা। তবে চলনবিলের বিভিন্ন খালে পানি থাকায় ব্রিজে দাঁড়িয়ে বাতাসের স্বস্তি পেয়েছেন বলে জানান তারা।
কথিত আছে, এ বিলের বুকে প্রমোদতরি ভাসিয়ে এক সময় রাজা-বাদশাহ, পাঠান, মোগলরা নিদারুণ ক্লান্তি ঝেড়েছেন। পর্যটকেরা চলনবিলের বিশালতা দেখে অভিভূত হয়েছেন। লেখকেরা রচনা করেছেন নানা কাহিনি। চলনবিলের মাছে ভোজ হয়েছে বনিয়াদদের। কালের বিবর্তনে এসবের অনেকটাই এখন বিবর্ণ। বিলের তলদেশে পলি জমে ধীরে ধীরে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বিশালতা। এরপরেও স্বরূপের জানান দিয়ে নানা সাজে ভ্রমণপিপাসুদের মুগ্ধ করে চলনবিল।
মন্তব্য করুন