বরগুনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৪, ০৪:৫২ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ছাত্রলীগ নেতার কল রেকর্ড ভাইরাল

আমতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন (সবুজ)। ছবি : কালবেলা
আমতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন (সবুজ)। ছবি : কালবেলা

বরগুনার আমতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন (সবুজ) এর কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ছাড়াও ওই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বেশ কিছু ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক ব্যক্তির পছন্দমত কমিটি দেওয়ার বিনিময়ে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে আবদুল্লাহ আল মামুন (সবুজ) এর মোবাইলে কথা বলার ২৯ সেকেন্ডের একটি কল রেকর্ড ভাইরাল হয়। এতে ওই সাধারণ সম্পাদকের এমন কার্যকলাপে উপজেলায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া কল রেকর্ডটি আগের এবং সুপার এডিট বলে দাবী করেছেন অভিযুক্ত আমতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন (সবুজ)। কলরেকর্ড ও অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে সত্যতা পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা।

ভাইরাল হওয়া ওই কল রেকর্ডে শোনা যায়, ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি সাধারণ সম্পাদকের নাম ধরে বলে নিজের পছন্দমত লোককে কমিটি দেওয়ার অনুরোধ করে কত টাকা দিতে হবে বলে জানতে চান। কত দিতে পারবেন? বলে জানান ওই সাধারণ সম্পাদক। কথপোকথনে বিশ বলে দাবী করেন ওই ছাত্রলীগ নেতা। উত্তরে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে দেওয়ার কথা বলেন বলেন অপর প্রান্তে থাকা ওই ব্যক্তি।

এছাড়াও আওয়ামী পরিবারের সন্তানদের অবমূল্যায়ন করে বিবাহিত ও বিএনপি পরিবারের লোকজনকে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়েছেন অভিযুক্ত সাধারণ সম্পাদক। এমন অভিযোগের কথা কালবেলাকে জানিয়েছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার একাধিক ছাত্রলীগ নেতা।

আমানউল্লাহ রহমান নামে এক ছাত্রলীগ নেতা কালবেলাকে বলেন, আমাকে আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের সভাপতি ও আমার এক বন্ধুকে সাধারণ সম্পাদক করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুজনের কাছ থেকে ১লাখ টাকা নিয়েছেন আবদুল্লাহ আল মামুন (সবুজ)। আমি জমি বন্ধক রেখে টাকা দিয়েছি এবং ওই বন্ধুর টাকার জামিনদার ছিলাম। সবুজ আমাদের পদও দিলো না, টাকাও ফেরত দেয়নি। নানা বাহানায় ঘুরিয়ে এখন আমার মোবাইল রিসিভ করেন না।

আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহসিন ফকির কালবেলাকে জানান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের কমিটির বিনিময়ে টাকা লেনদেন করার কথা বলার একটি কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরেছে। হলদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা রায়হানের সঙ্গে কথা বলার কল রেকর্ড এটি। এ ছাড়াও রিয়াদ নামের আরও একজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে সবুজ। উপজেলার আরও অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলে সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি জানান, সদ্য ঘোষিত আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগে আলআমিন নামে একজনকে সভাপতি করা হয়েছে। আল আমিন দুটি বিয়ে করেছে। বর্তমানে দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে সংসার করছেন। সাধারণ সম্পাদক রিয়াদের বাবা বশির উদ্দিন মেম্বার বর্তমান ইউনিয়ন বিএনপির ৫নম্বর যুগ্ম আহবায়ক এবং সংসদ নির্বাচনের আগে আমতলীতে সাকুরা বাস পোড়ানোর মামলার ২৯নম্বর আসামি।

এ সময় আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি বাতিলসহ নিবেদিত আওয়ামী পরিবারের সন্তানদেরকে মূল্যায়ন করে নতুন কমিটি করতে জেলা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার দাবী জানান সদ্য সাবেক এ ছাত্রলীগ নেতা।

আমতলী পৌর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অমিত রসুল অপি এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে কালবেলাকে জানান, টাকার বিনিময়ে ছাত্রলীগের মত একটি আদর্শ সংগঠনের কমিটি দিয়ে সংগঠনে ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করছে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। একজন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতার কাছে টাকা দাবী করার ভাইরাল কল রেকর্ডের সমালোচনা করেন তিনি। অনৈতিকভাবে বিবাহিত ও বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে কমিটিতে পদ পদবি দেওয়ার কথাও জানান তিনি।

উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ব্যর্থ দাবী করে, আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি দেওয়ার দাবী করেন পৌর ছাত্রলীগের এই নেতা। এ সময় তিনি জেলা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি আল-আমিন হোসাইন তার বিয়ের অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে কালবেলাকে বলেন, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে কোন প্রমাণ নেই। সাধারণ সম্পাদকের বাবার রাজনৈতিক অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, বিষয়টি তার জানা নেই বলে ফোন কেটে দেন।

সাধারণ সম্পাদক তন্ময় ইসলাম রিয়াদ কালবেলাকে জানান, তার বাবার বিষয়ে যে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটির কাগজটি দেখানো হয়েছে সেটি এডিট করা। তার বাবার কোন মিটিং মিছিলের ছবি নাই।

অভিযুক্ত উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন (সবুজ) ভাইরাল হওয়া ওই কল রেকর্ডটি সুপার এডিট দাবী করে কালবেলাকে বলেন, কল রেকর্ডটি অনেক আগের, ২০১৭ সালে আরও একবার ভাইরালের কথা জানান এ নেতা।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কালবেলাকে বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের ভাইরাল কল রেকর্ড ও অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে সত্যতা পেলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, কী বলছে আবহাওয়া অফিস?

দুর্গাপূজায় কঠোর নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে : ডিবি প্রধান

ব্রাহ্মণপাড়ায় সড়কের ওপর বাঁশের সাঁকো!

ইরানের পরবর্তী পরিকল্পনা জানালেন আলী খামেনি

বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ

ফেসবুক থেকে আয় করা সহজ হচ্ছে

আট মাসে বজ্রপাতে মৃত্যু ২৯৭

অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের সময় আটক ৬

ডিবি কার্যালয়ে আয়নাঘর থাকবে না

টাইগারদের বিপক্ষে কেমন হবে ভারতের একাদশ?

১০

শরীয়তপুরে ১০২ মণ্ডপে হবে দুর্গাপূজা, চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি

১১

ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে কুমারী পূজা হচ্ছে

১২

বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত

১৩

ইয়েমেনের ১৫ নিশানায় মার্কিন হামলা

১৪

‘বিরল’ এক সফরে পাকিস্তান যাচ্ছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

১৫

গাজীপুরে বাসচাপায় যুবক নিহত

১৬

দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠে থাকবে বিএনপি : আজাদ

১৭

সাড়ে ৩ কোটি টাকার চাল নিয়ে লাপাত্তা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা

১৮

সাতক্ষীরায় ৯ মাস বেতন পাচ্ছেন না ৪২০ শিক্ষক

১৯

সিরাজগঞ্জে হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার

২০
X