প্রদীপ মোহন্ত, বগুড়া
প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৪, ০৭:২৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ঈদের ছুটিতে প্রস্তুত মহাস্থানগড়

বগুড়ার মহাস্থানগড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ছবি : কালবেলা
বগুড়ার মহাস্থানগড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ছবি : কালবেলা

ঈদুল আজহার ছুটিতে এবার বগুড়ার মহাস্থানগড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে পারে বলে মনে করছেন প্রত্নত্তত্ব বিভাগ। বগুড়ার প্রধান পর্যটনকেন্দ্র মহাস্থানগড়ে ঈদের প্রথম দিন থেকে বগুড়াসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে প্রিয়জনদের নিয়ে ভ্রমণপিপাসুরা মহাস্থানগড়ে বেড়াতে আসেন প্রাচীন পুরাকীর্তি এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখতে। এই কারণে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

মহাস্থানগড় প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন রাজ্যের রাজধানী পুণ্ড্রনগর। এটি তৃতীয় খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে পঞ্চদশ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে মৌর্য, সুঙ্গ, গুপ্ত, পাল, সেন প্রভৃতি বৌদ্ধ ও হিন্দু রাজবংশের রাজত্বের রাজধানী ও শাসনকেন্দ্র ছিল। আর এ কারণেই মহাস্থানগড় একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। আড়াই হাজার বছরের সভ্যতা নিয়ে মাটির নিচে চাপা পড়া এই নগরীটি প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ও এক কিলোমিটার প্রশস্ত। তবে এই এলাকাটি সমতল‚ মির তুলনায় অনেক উঁচু। নগরীটি মাটির নিচে চাপা পড়লেও এর দুর্গপ্রাচীর আর প্রবেশদ্বারের ধ্বংসাবশেষ এখনো দৃশ্যমান। পাঁচ হাজার ফুট দীর্ঘ প্রাচীরবেষ্টিত ও চার হাজার ৫০০ ফুট প্রশস্ত নগরীর পুরোটাই প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশনে সমৃদ্ধ। প্রতিনিয়ত প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বিভিন্ন নিদর্শন বেরিয়ে আসছে নগরীটিতে। বিভিন্ন সময় প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বিভিন্ন আমলের নির্মাণ স্তরের স্থাপত্য কাঠামোর পাশাপাশি বেশ কিছু প্রত্নসামগ্রী উদ্ধার হয়। প্রত্নসামগ্রীগুলো মহাস্থান জাদুঘরে রাখা আছে।

ঈদের দিন জাদুঘরসহ আশেপাশের সব প্রত্মসাইট বন্ধ থাকবে। তবে এখানে যারা আসেন তারা মূলত- আশপাশের জেলায় আত্মীয় বাড়িতে আসেন। সেখান থেকে সবাই দল বেধে মহাস্থানগড় বেড়াতে আসেন। পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন।

এজন্য কেউ আগাম হোটেল বুকিং করেননি। একাধিক আবাসিক হোটেলে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা জানান, ঈদের দিন থেকে প্রচুর দর্শনার্থী আসেন এখানে। তা লেগে থাকে চার-পাঁচ দিন। ঈদের ছুটি বেশি হলে দর্শনার্থীর চাপও বেড়ে যায়।

এই সময়গুলোতে গড়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ হাজার দর্শনার্থী তো হবেই। যদিও ঈদ উপলক্ষে মহাস্থানগড় আলাদাভাবে সাজানো হয়নি। তবে জাদুঘরের ভেতর পরিষ্কার করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। অন্যান্যবাবের তুলনায় এবার দর্শনার্থীর চাপ বাড়তে পারে বলে মনে করছেন এই কর্মকর্তা। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

বগুড়া মহাস্থানগড়ের দর্শনীয় স্থান

বগুড়ার মহাস্থানগড়ে অনেকগুলি ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যেমন পরশুরাম প্যালেস, জীবন্ত কূপ বা জিয়ৎ কুণ্ড, গোবিন্দ ভিটা, বৈরাগীর ভিটা, খোদার পাথর ভিটা, মানকালীর কুণ্ড, মুনির ঘোন, শীলা দেবীর ঘাট এবং মহাস্থান মাজার। এ ছাড়াও, নগরীর বাইরে, প্রায় পাঁচ বর্গমাইল অঞ্চলে বেহুলার বাসর ঘর, গোকুল মেড়, ভীমের জাঙ্গল, ভাসুবিহার, বিহার ধাপ এবং অনেকগুলি ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে।

শাহ সুলতান বলখীর মাজার

বগুড়া মহাস্থানগড়ের আগেই অবস্থিত রয়েছে হজরত শাহ সুলতান বলখী মহীসওয়ারের মাজার।

প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর

বগুড়া মহাস্থানগড় জাদুঘরটি, যা ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, বিভিন্ন প্রত্ননিদর্শন সমৃদ্ধ এক প্রাচীন স্থান। এই জাদুঘরে সংরক্ষিত করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে খননের ফলে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলো। জাদুঘরটি সারা সপ্তাহে প্রতিদিন খোলা থাকে, কিন্তু রোববারে পূর্ণ দিবস, সোমবারে অর্ধ দিবস এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে জাদুঘরটি বন্ধ থাকে।

গোবিন্দ ভিটা

গোবিন্দ ভিটা, যা বগুড়া মহাস্থানগড় জাদুঘরের সামনে করতোয়া নদীর কিনারায় অবস্থিত, এটি মূলত একটি প্রাচীন মন্দির। খ্রিস্টীয় ১২শ-১৩শ শতকে রচিত সংস্কৃতি গ্রন্থ ‘করতোয়া মহাত্মতে এই মন্দিরের উল্লেখ রয়েছে। ১৯২৮-২৯ সালে এবং পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে, এখানে প্রাচীন যুগের নানান নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে, যা খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতক থেকে শুরু হয়েছে।

জিয়ৎ কুণ্ড

বগুড়া মহাস্থানগড়ের রাজা পরশুরামের প্রাসাদের সামনে বড় ক‚পের নাম জিয়ৎ কুণ্ড। কথিত আছে, এই কূপের পানি পান করে রাজা পরশুরামের আহত সৈন্যরা সুস্থ হয়ে যেত। তাই এই কূপটিকে না কি বলা হত অলৌকিক কূপ।

পরশুরামের প্রাসাদ

জিয়ৎ কুণ্ডর পাশেই একটি প্রাসাদের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা, যা হিন্দু নৃপতি পশুরামের প্রাসাদ হিসেবে পরিগণিত হতে পারে, যেটি ঐতিহাসিকভাবে মনে করে সবাই মনে হয়।

বেহুলার বাসরঘর

বেহুলার বাসরঘর এর আরেক নাম গোকুল মেধ। মহাস্থানগড় থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণে গোকুল গ্রামে অবস্থিত এ প্রত্নস্থলটি। ঐতিহাসিকদের মতে, এটি আনুমানিক সপ্তম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত। ইট দিয়ে নির্মিত এ স্তূপটি পূর্ব পশ্চিমে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ এবং তিনকোণা বিশিষ্ট। খননের ফলে এ স্থাপনাটিতে ১৭২টি কক্ষ আবিষ্কৃত হয়েছে।

শীলাদেবীর ঘাট

গড়ের পূর্বপাশে রয়েছে করতোয়া নদী এর তীরে শীলাদেবীর ঘাট। শীলাদেবী ছিলেন পরশুরামের বোন। এখানে প্রতি বছর হিন্দুদের স্নান হয় এবং একদিনের জন্য একটি মেলা বসত।

কীভাবে আসবেন মহাস্থানগড়

ঢাকা থেকে বগুড়া যাওয়া সহজ, বাস বা ট্রেন ব্যবহার করে। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে রংপুর এক্সপ্রেস বা লালমনি এক্সপ্রেস দিয়েও বগুড়া পৌঁছানো যায়। বগুড়ার হাড্ডিপট্টি বা রেলস্টেশন হতে খুব সহজে বাস অথবা অটোরিকশা নিয়ে ৩০-৪০ মিনিটের মধ্যে মহাস্থানগড় পৌঁছানো সম্ভব। শহরের দত্তবাড়ি স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন সবসময় হাজারো সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। ভাড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকা। প্রতি বছর এই স্থানে বেড়াতে আসে অসংখ্য পর্যটক।

বগুড়া মহাস্থানগড় কোথায় কীভাবে থাকবেন

মহাস্থানগড়ে আছে কিছু আবাসিক হোটেল, কিন্তু তাদের মান খুব একটা ভালো নয়। একবার বগুড়া শহরে এসে দেখতে পারেন, যেখানে রাত্রি-যাপনের জন্য বিভিন্ন আবাসিক হোটেল রয়েছে। আপনি যদি ভালো মানের হোটেলে থাকতে ইচ্ছুক হন, তাহলে আকবরিয়া, সেঞ্চুরি মোটেল, সিয়েস্তা হোটেল, ম্যাক্স মোটেল রেডচিলি, পর্যটন মোটেল রয়েছে। এ ছাড়াও যদি আভিজাত্য ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশে থাকতে চান তাহলে ফাইভ স্টারমানের হোটেল মম ইন এবং ফর স্টার মানের নাজ গার্ডেন হোটেল রয়েছে। তবে এখানে এলে মহাস্থানের চালের আটার তৈরি বিখ্যাত কটকটি খেতে ভুল করবেন না।

বগুড়া থেকে যেভাবে যাওয়া যাবে মহাস্থানগড়

মহাস্থানগড় বগুড়া শহর ১২কিলোমিটার উত্তরে শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। যেতে হলে শহরের সাতমাথা থেকে পায়ে চালিত রিকশা অথবা অটোরিকশায় যেতে হবে দত্তবাড়ি। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ২৫-৩০ টাকা ভাড়ায় সরাসরি পৌঁছে যেতে পারবেন মহাস্থান শাহ সুলতান বলখীর মাজারের দরজা পর্যন্ত। কেউ যদি বাসে মহাস্থান যেতে চান তাহলে তাকে দত্তবাড়ি থেকে মাটিডালি যেতে হবে। মাটিডালি থেকে পর্যাপ্ত বাস পাওয়া যাবে মহাস্থান যাওয়ার জন্য।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দেশের ৩ অঞ্চলে হিট ওয়েভের শঙ্কা

ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ

চট্টগ্রামে হাতকড়া পরে ফিরল সাবেক এমপি ফজলে করিম

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা প্রতিরোধে একমত যুক্তরাষ্ট্র-ফ্রান্স

প্রধান উপদেষ্টার / সহকারী প্রেস সচিব হলেন দুই তরুণ সাংবাদিক

শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব, শিক্ষাব্যবস্থায় অচলাবস্তা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে ধূম্রজাল

গণপিটুনির ঘটনায় / জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার

জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তারেক রহমান

বিশেষ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার দাবি লায়ন ফারুকের

১০

জাবিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যা, এক সমন্বয়ককে অব্যাহতি

১১

ড. ইউনূসকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের

১২

মাদারীপুরে কৃষককে পিটিয়ে হত্যায় মানববন্ধন

১৩

জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিডের টাওয়ার পদ্মায় বিলীন

১৪

দীঘিনালায় দুপক্ষের সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

১৫

তিন মাস ধরে ১৪০০ চা শ্রমিকের মজুরি বন্ধ

১৬

নীতিমালার খসড়া অনুমোদন / সম্পদের হিসাব দিতে হবে উপদেষ্টাদেরও

১৭

জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিডের টাওয়ার পদ্মায় বিলীন

১৮

বিটকয়েনে বার্গারের দাম পরিশোধ করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

১৯

ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৭

২০
X