উত্তর সিকিমে ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা অববাহিকায় গত কয়েক দিন ধরে পানি বাড়ায় নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে স্বল্প মেয়াদি বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তবে গত শনিবার (১৫ জুন) রাত থেকে পানি কমতে শুরু করলেও বাদাম ক্ষেত পানিতে ডুবে যাওয়ায় ও স্রোতে ভেসে যাওয়ায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিস্তা পাড়ের কৃষকরা। এ ছাড়া পানি কমতে শুরু করায় তিস্তা পাড়সহ ফসলের জমিতে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
সরেজমিনে রোববার (১৬ জুন) দুপুরে উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের শিবদেব পানিয়ালের ঘাট এলাকায় দেখা যায়, নদীতে ঘোলা পানির স্রোত বইছে। চরের অধিকাংশ জমি পানি নিচে নিমজ্জিত। কৃষকের ফসলি জমিতে ধরেছে ভাঙন। কেউ কেউ নদীর পাড়ে বাদাম তুলে স্তূপ করে রেখেছেন।
এ সময় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, গতকাল আরও পানি ছিল। রাত থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। ফলে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
গাবুড়ার চরের কৃষক জাফর আলী বলেন, আমি ২০ দোন (জমির পরিমাপ) জমিতে বাদাম করেছিলাম। হঠাৎ করে নদীর পানি বৃদ্ধি হওয়ায় বাদাম সংগ্রহ করতে পারিনি। এতে আমার প্রায় ২ লাখ টাকার উপরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চেয়ারম্যান, মেম্বার বা কেউ আমাদের খোঁজখবর নিতে আসেনি।
আরেক কৃষক মুকুল মিয়া বলেন, আমি ৭ দোন জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম। এক দোন মাটির বাদাম পানির স্রোতে ভেসে গেছে।
শিবদেব চরের কৃষক সোহরাওয়ার্দী জানান, পানি বাড়তে শুরু করায় তড়িঘড়ি করে অনেক কৃষক বাদাম তুলে তিস্তার পাড়ে স্তূপ করে রাখলেও রাতের বেলা তাদের বাদাম চুরি হচ্ছে। এ ছাড়া রোদ না থাকায় বৃষ্টিতে ভেজার কারণে তোলা বাদাম নিয়েও বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। সব মিলে তিস্তা পাড়ের কৃষকদের ঈদ আনন্দ যেন ম্লান হতে বসেছে।
এ বিষয়ে মোবাইলে ছাওলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নাজির হোসেনের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রফিকুল ইসলামের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি কালবেলাকে বলেন, অসময়ের বন্যা ও ভাঙনে প্রতি বছর ১ লাখ কোটি টাকার সম্পদ তিস্তার গর্ভে চলে যায়। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য তিস্তা খনন, সংরক্ষণ ও তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নাই।
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল হক সুমন কালবেলাকে বলেন, আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বন্যাসংক্রান্ত প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার উপক্রম হলে বা গেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে।
রংপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, শনিবার বিকেল ৩টার দিকে তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানির লেভেল ছিল ২৮.৫৪ মিটার। আজ রোববার বিকেল ৩টার দিকে পানির লেভেল ছিল ২৮.৩০ মিটার। গতকালের চেয়ে আজ ২৪ সেন্টিমিটার কম পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সামনে কিছুদিন পানি কমবে-বাড়বে, এভাবেই চলতে থাকবে।
মন্তব্য করুন