জিআই পণ্য স্বীকৃত স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় রংপুরের মিঠাপুকুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে আসছে ২০ জুন থেকে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও আম বাজারে আসার দিন গুনছেন চাষিরা। কয়েক বছরের তুলনায় এবারে আমের ফলন কিছুটা কম হলেও বাজারে চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় খুশি তারা।
মিঠাপুকুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, মিঠাপুকুরে ১১শ ৫০ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙ্গা আমের চাষাবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ২৬ হাজার টন। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রংপুর জেলায় ৩ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙ্গা আমের চাষাবাদ হয়েছে ১ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৭১০ টন।
মিঠাপুকুর উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি মাসের ২০ তারিখ হবে পরিপক্ব হাঁড়িভাঙ্গা আম বাজারে আসছে। এর আগে বাজারে হাঁড়িভাঙা আম পাওয়া গেলেও তা অপরিপক্ব হবে। একটু বেশি দামের আশায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা নিয়ম ভঙ্গ করে বাজারে অপরিপক্ব হাঁড়িভাঙ্গা আম বিক্রি করছেন। হাঁড়িভাঙ্গা প্রকৃত স্বাদ পেতে অপেক্ষা করতে হবে জুনের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত। বর্তমানে বাগানগুলোতে আমের শেষ মুহূর্তের পরিচর্যা চলছে। তবে টানা তাপপ্রবাহের কারণে এবার অনেক আমের গুটি ঝরে পড়েছে। এ ছাড়া বৈরী আবহাওয়ায় আমের আকার এ বছর অনেকটা ছোট হয়েছে। এসব কারণে ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা চাষিদের। এ নিয়ে চাষিদের দুশ্চিন্তার ভার করলেও দাম ভালো পেলে সেটি পুষিয়ে যাবে বলে আশা তাদের।
মৌসুমের শুরুতে হাঁড়িভাঙ্গা চাহিদা বেশি থাকায় এর দাম কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে পাইকারিতে প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙ্গা আকারভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে পারে বলে চাষিরা জানান। খুচরা বাজারে দাম পড়বে আরেকটু বেশি। কৃষি বিভাগ ধারণা করছে, এবার ১৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আমের বেচাকেনা। গত বছর হয়েছিল প্রায় ২০০ কোটি টাকার ওপরে।
মিঠাপুকুরের আমবাগানে সরেজমিনে দেখা যায়, সবুজ পাতার ফাঁকে গাছে গাছে ঝুলছে আম। চাষিরা জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর আমের গুটি কম এসেছে এবং খরায় আমের গোড়া শুকিয়ে ঝরে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আমের প্রধান বাজার মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জ হাট। এটি পাইকারি বাজার।
আমচাষিরা জানান, এ বছর পৌষ-মাঘ মাসে আমের মুকুল আসার সময়ে অসময়ের বৃষ্টি হওয়ায় বাগানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তার ওপর এবার এপ্রিল-মে মাসের টানা তাপপ্রবাহে আমগাছে পোকার আক্রমণ হয়েছে। ফলে ঝরে পড়েছে আমের গুটি। পোকা দমনে কীটনাশক ও চাষিদের সাধ্যমতো সেচ দিয়েও খুব একটা কাজ হয়নি। এর ফলে আম উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন রংপুরের আমচাষিরা।
মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আবেদীন বলেন, আমের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ ও পরামার্শ প্রদান করে যাচ্ছে কৃষি অফিস। এ ছাড়াও কৃষকদের বিনামূলে বীজ ও সার এবং অন্যান্য উপকরণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
ইউএনও বিকাশ চন্দ্র বর্মন বলেন, জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর হাঁড়িভাঙ্গা আমের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে কৃষক লাভবান হবে। তবে পরিপক্ব আম বাজারে আসতে ২০ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে কৃষকদের।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, কৃষি বিভাগ ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে ২০ জুন থেকে হাঁড়িভাঙ্গা আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আমের বাজারজাত করতে যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে নিয়মিত মনিটরিং করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন