খুলনার পাকইগাছায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোতে নেই ঈদের আনন্দ। সরকারি সহযোগিতা না থাকায় ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো যেন একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কিছু এনজিও ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করলেও সেটি অপ্রতুল।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্য সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত দেলুটি, সোলাদানা, গড়ইখালী ও লস্কর ইউনিয়ন। দেলুটি ইউনিয়নের তেলিখালী, জিরবুনিয়া, গেওয়া বুনিয়া, পারমধুখালী এলাকার ওয়াপদার বাঁধ ভেঙে সাগরের লবণ পানি পোল্ডার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। ফলে বাড়ি-ঘর তলিয়ে যায়, ভেসে যায় পুকুর ও ঘেরের মাছ এবং বিভিন্ন ফসল। নষ্ট হয়েছে ওয়াপদার বাঁধ ও রাস্তা। রিমালের একমাস পেরোলেও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারিনি এসব এলাকার মানুষজন। স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ সংস্কার হলেও স্থায়ী বেড়িবাঁধ না হওয়ায় সবসময় আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে এসব এলাকার বাসিন্দাদের।
গড়ইখালী ইউনিয়নের কুমখালী ভাঙনকবলিত একাকার আসাদুল সরদার জানান, রিমালের কারণে শিবসা নদীর পানি ওয়াপদার বাঁধ ভেঙে আমাদের বসতবাড়ি সব নষ্ট করে দিয়েছে। এখনও একটা ঘর তৈরি করতে পারিনি। খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। কোরবানি ঈদ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, যাদের থাকার মতো মাথার উপর চাল নেই, রান্না করার চুলা নেই, হাঁড়িতে চাল নেই তাদের আবার ঈদ বা কোরবানি!
একই এলাকার রশিদা বেগম জানান, আমাদের ঘরের পাশ থেকে ওয়াপদার বাঁধ ভেঙে ভেতরে পানি প্রবেশ করে। ফলে আমাদের ঘরবাড়িসহ সবকিছু স্রোতে চলে যায়। আমরা আশ্রয়কেন্দ্র থেকে সকালে এসে আর কিছুই পাইনি। ওয়াপদার বাঁধের ওপর খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। বাচ্চাদের তাদের নানার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। ঝড়ের পরে মাত্র ১০ কেজি চাল ছাড়া কোনো সহযোগিতা পাইনি। এখন আমরা ঈদ করব কীভাবে? যাদের ঘরবাড়ি নেই তাদের কি আর ঈদ থাকে?
গড়ইখালী ইউপি সদস্য আক্তার গাইন জানান, এ ভাঙনের কাছে ৮টি পরিবার বসবাস করত। তাদের অবস্থাও ভালো ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রিমালের জন্য সবাই একেবারে পথের ফকির হওয়ার অবস্থা।
দেলুটি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল জানান, আমার এই ইউনিয়ন সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। স্বেচ্ছাশ্রমে আমরা বাঁধগুলো দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এখন পানি কমলেও এলাকার মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। সরকারি সহযোগিতা চাল ও বাঁধ মেরামতের কিছু জিও বস্তা ছাড়া কিছুই পাইনি। তাদের ঈদ আনন্দ নেই। কিছু এনজিও কাজ করছে তবে সেটা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের পর সব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। প্রথমে কিছু চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল সেগুলো বিতরণ করা হয়েছে। সরকারি অন্যকোনো সহযোগিতা এলে সঠিকভাবে বিতরণ করা হবে। আসলেই ক্ষতিগ্রস্তরা কষ্টে আছে।
মন্তব্য করুন