কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় মো. আসিফ আলী (১৭) নামের এক কিশোরকে গুলির ঘটনা ঘটেছে। গুলিবিদ্ধ আসিফ ও তার পরিবারের দাবি একই গ্রামের নীরব (১৭) তাকে হত্যার উদ্দেশ্য গুলি করেছে।
ওই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেনি, গ্রেপ্তার হয়নি আসামি। এমনকি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি আগ্নেয়াস্ত্র। পুলিশ বলছে, ঘটনাটি রহস্যঘেরা। কেউই সঠিকভাবে মুখ খুলছে না।
আসিফ ভেড়ামারার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের আরকান্দি উত্তরপাড়ার কুয়েত প্রবাসী আব্দুল হান্নানের একমাত্র ছেলে। সে সদ্য এসএসসি পরীক্ষায় রাইটা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পাস করেছে।
শুক্রবার (১৪ জুন) সরেজমিনে আহতের পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ জুন বিকেল ৩টার দিকে আলামিনের ফোন পেয়ে প্রতিদিনের মতো আলামিন, জাহিদ, আসিফ ও আসিফের চাচাতো ভাই রাব্বি বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ের মধ্যে লুডু খেলছিল। হঠাৎ করে একই এলাকার কামরুলের ছেলে নীরব এসে কোমর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র বের করে হাঁটু গেড়ে আসিফের বুকের বাম পাশে গুলি করে। পরিবারের লোকজন বলছে, পূর্ব শত্রুতার জেরে এমন ঘটনা ঘটেছে।
প্রথম অবস্থায় ঘটনাটি চাপা দেওয়ার জন্য স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে তারা তাকে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ভর্তি করায়। পরিস্থিতির অবনতি হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। তবে এ ঘটনা কেউ যাতে না জানতে পারে সেজন্য চরম নিরবতা গ্রহণ করা হয়।
শুক্রবার আসিফের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে কাতর কণ্ঠে সে কালবেলাকে জানায়, নীরব হঠাৎ করে উপস্থিত হয়ে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলে, আমি তোকে হত্যা করব। আমি তাকে অনুরোধ করে বলি, আমাকে মেরো না। তারপরও সে আমার বুকের বাম পাশে গুলি চালায়। কেনো গুলি করা হচ্ছে- এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে আসিফ বলে সম্ভবত পূর্ব শত্রুতা হতে পারে। এর আগে মোবাইল ভাঙা নিয়ে তার আর আমার মধ্যে একটি শত্রুতা তৈরি হয়েছিল। আমি এর বিচার চাই।
এ বিষয়ে মোবাইলে কথা বলার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও নীরবের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার বাড়িতে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি।
আহতের চাচা রেজাউল আলি বলেন, এই কিশোর বয়সে সে অস্ত্র কীভাবে পেল। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা থানায় অভিযোগ করব। অস্ত্র উদ্ধার ও আসামি গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল রানা পবন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ঘটনা ইউনিয়নব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এই কিশোর বয়সে তার হাতে কীভাবে অস্ত্র এলো, থানা পুলিশকে আমি সেটা তদন্ত করে বের করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, আসিফ নামের গুলিবিদ্ধ এক কিশোর ১৩ জুন ভর্তি হয়েছিল, আমরা তাকে চিকিৎসা দিয়েছি। উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের রেফার্ড করেছি।
ভেড়ামারা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহসীন আল মুরাদ কালবেলাকে বলেন, পুরো বিষয়টি নিয়ে এখনো আমরা রহস্যের মধ্যে আছি। গুলিবিদ্ধ আসিফ, তার মা ও তার চাচাতো ভাই রাব্বি রাজশাহীতে থাকায় আমরা সঠিক তথ্য উদঘাটন করতে পারি নাই। তা ছাড়া তাদের কথাতেও অসংলগ্নতা রয়েছে।
এ বিষয়ে থানায় এখনো কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি। তারা অভিযোগ না করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করা হবে। তদন্ত চলছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বল জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহসীন আল মুরাদ।
মন্তব্য করুন