বেতন বকেয়া রেখেই ঈদুল আজহার ছুটি ঘোষণা করেছে গাজীপুরের অনেক শিল্প কারখানার মালিক। শিল্প পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, এবার গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে ৭২টি কারখানায় বেতন ভাতা পরিশোধ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। পুলিশ ও বিজিএমইএর নেতারা বলেছেন, সব কারখানায় যেন ঈদের আগে বেতন ভাতা পরিশোধ করতে পারে সেজন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
শিল্প পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, ঈদুল আজহার আগে বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) পর্যন্ত গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের দুই হাজার ২১৫টি তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে এক হাজার ২২৫টিতে মে মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ১৫ জুন কারখানা ছুটি ঘোষণার আগ পর্যন্ত শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ করবে মালিক পক্ষ। এর আগে গত এপ্রিল মাসের বেতন পরিশোধ করেছে দুই হাজার ২১৩টি কারখানা। ফলে ওই মাসে শতকরা ৯৯ দশমিক ৯৫ ভাগ কারখানা তাদের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে সক্ষম হয়। তবে এবার ঈদের আগে অন্তত ৭২টি কারখানায় বেতন ভাতা পরিশোধ নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। মাঝারি মানের এই কারখানাগুলোতে যেন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য সজাগ দৃষ্টি রাখছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরই মধ্যে এসব কারখানা কর্তৃপক্ষের লোকজনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক মতবিনিময় সভা করে বেতন ভাতা পরিশোধে তাগাদা দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহমেদ বলেন, মে মাসে গাজীপুরে খোলা ছিল দুই হাজার ২১৫টি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বেতন ভাতা পরিশোধ করেছে ১ হাজার ২২৫টি। ঈদের যেহেতু কয়েক দিন বাকি রয়েছে, এর মধ্যে বেশির ভাগ কারখানার মালিক পক্ষ তাদের শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ করতে পারবেন।
তবে বেশির ভাগ কারখানা মালিক ও কর্তৃপক্ষের দাবি, ঈদের আনন্দ শ্রমিকরা যেন উপভোগ করতে পারেন সেই লক্ষে শ্রমিকদের মে মাসের বেতন, বোনাস ও ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্পেরো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, আমার যেসব কারখানা রয়েছে সেখানে ১৪ হাজার শ্রমিক, কর্মচারী কাজ করেন। এখানে ৬-৭ তারিখের ভেতরে বেতন পরিশোধ করা হয়। এজন্য মে মাসের বেতন আমাদের আগেই দেওয়া হয়েছে। এখন বোনাসও দিয়ে দিয়েছি। আমরা ১০ দিনের জন্য কারখানা বন্ধ রাখছি যাতে শ্রমিকরা ভালোভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারেন।
সাদমা গ্রুপের পরিচালক সোহেল রানা বলেন, আমাদের এখানে ৫ হাজার শ্রমিক, কর্মকর্তা কাজ করেন। গত এক সপ্তাহ আগে আমরা তাদের বোনাস দিয়েছি। মে মাসের বেতন ও পরিশোধ করা হয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার আমাদের কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হবে, কারখানা খুলে দেয়া হবে ২৫ জুন।
বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বৈশ্বিক সঙ্কট থাকলেও ঈদের আগে বেতন ভাতা পরিশোধে মালিকদের তাগিদ দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহায়তা করলে বেশির ভাগ মালিক তাদের শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ করতে পারবেন।
বিজিএমইএর স্ট্যানডিং কমিটির চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিজিএমইএ প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে, কারখানা গুলোকে কিভাবে শ্রমিক বান্ধব, পরিবেশ বান্ধব করা যায়। কিছুটা শঙ্কার কথা বলা হলেও বিজিএমইএ, বিকেএমইএর অধীনের কারখানা তাদের বেতন ভাতা পরিশোধ করতে পারবেন। এজন্য বিজিএমইএসহ শ্রম মন্ত্রণালয় তাগাদা দিচ্ছে যেন নির্ধারিত সময়ে বেতন ভাতা দিয়ে দেয়া হয়।
শিল্প পুলিশের দাবি, বেশিরভাগ কারখানায় মালিক পক্ষ ১৫ জুনের মধ্যেই তাদের শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ করবেন। এজন্য মালিক পক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে তাদের তাগাদা দেয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে গাজীপুর-২ শিল্পাঞ্চল পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম বলেন, আমরা ৭২টি কারখানা সনাক্ত করেছি যেখানে বেতন ভাতা পরিশোধে সমস্যা হতে পারে। এ জন্য আমাদের অফিসারদের ভাগ করে দিয়েছি যাতে তারা ডোর টু ডোর যোগাযোগ রাখতে পারেন। শ্রমিকদের সংগঠনের সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ আছে। যেসব প্রতিষ্ঠানে সমস্যা আছে তাদের আমরা ডেকেছি, মতবিনিময় করছি। আশা করি শতভাগ না হলেও ৯০ ভাগ কারখানায় ১৫ জুনের মধ্যে বেতন, বোনাস দিতে পারবে।
গাজীপুরে উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিজিএমইএ এর অন্তর্ভুক্ত ৭৩৬ এবং বিকেএমইএর অধীনে ১২৮টি, বিটিএমএর ১৩০টি এবং অন্যান্য এক হাজার ২২৪টি কারখানা রয়েছে।
মন্তব্য করুন