কোলে ছোট্ট শিশু। ঘর ভাঙা, নেই খাবারও। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে একরকম। ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ঘরবাড়ি হারিয়ে তাই এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার চরফলকন ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা পাখী বেগম নামের এক নারী।
ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে উড়ে গেছে ঘর। কয়েক ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে নিয়ে গেছে ঘরের আসবাবও। অনেকটা খোলা আকাশের নিচে দিন কাটছে পাখিসহ তার আশপাশের বেশ কয়েকটি পরিবারের।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগরের মেঘনা নদীর উপকূলীয় এলাকায় দূর্বিষহ জীবনের এ চিত্র দেখা গেছে।
আরেক প্রতিবেশী সত্তরোর্ধ কহিনুর বেগম। তার সংসারে ছেলে, ছেলে বউ আর নাতিন। ঘূর্ণিঝড়ে দোচালা টিনের ছোট্ট ঘরটি উড়ে নিয়ে যায়। পরে সবাই মিলে টিনের চালা কুড়িয়ে এনে কোনোমতে ভিটির উপর রেখে মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছে। টিনের তোলা ঘরে থাকেন পরিবারের চার সদস্য।
চোখে মুখে অজানা আশঙ্কা নিয়ে কহিনুর বলেন, ছেলেটা নদীতে মাছ ধরত। কিছুদিন আগে তার জালটি পুড়িয়ে ফেলা হয়। এখন কোনো কাজই নেই। তাই ঘর মেরামত তো দূরের কথা খাবার জোটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
এ ছাড়া রিমালের তাণ্ডবে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চর ফলকন ইউনিয়নের মাতাব্বর হাট সংলগ্ন সালামত উল্যা হাওলাদার সড়কের দক্ষিণ মাথায় বসবাস তাদের। মেঘনা নদীর তীরবর্তী হওয়ায় এসব বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত নদী ভাঙন, জোয়ারে প্লাবন, এসব নিয়ে একরকম যুদ্ধ করে বসবাস তাদের।
ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত শামছুন নাহার, বিবি কহিনুর, বাঁধন হোসেন, পাখি বেগম, ফাতেমা আক্তার, মো. জাহাঙ্গীর, বিবি আয়েশা বলেন, আমাদের থাকা ও রান্না করার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। কিন্তু আমাদের কোনোরকম সহযোগিতা করা হয়নি।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, ঘূর্ণিঝড় তাদের খোলা আকাশের নিচে দাঁড় করিয়েছে। থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। একবেলা রান্না হলে তো আরেক বেলা হয় না। চেয়ারম্যান-মেম্বার এসে ঘরের ছবি তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু কোনো খাদ্য সহায়তা বা আর্থিক সহায়তা পাননি তারা।
ক্ষতিগ্রস্তরা আরও বলেন, শুনেছি দুর্যোগে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারি সহায়তা আমাদের কাছে এসে পৌঁছায় না। নদী আমাদের খুব কাছেই, যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হই। আমাদের অন্য কোথাও যাবার জায়গা নেই। নদীর পাড়েই থাকতে হয়। জলোচ্ছ্বাসে ঘর নিয়ে গেছে, বসতভিটাও নিয়ে কোনো এক সময় নিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চর ফলকন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোশারেফ হোসেনের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ঘর মেরামত বা নির্মাণের জন্য নগদ অর্থ কিংবা টিন বরাদ্দ আসেনি। বরাদ্দ পেলে তা দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন