কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তিন রোহিঙ্গাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে দূর্বৃত্তরা। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ছয়জন রোহিঙ্গা।
সোমবার (১০ জুন) ভোরে পৃথক সময়ে উখিয়ার ৪ নম্বর (এক্সটেনশন) রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এফ ব্লকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতেরা হলেন ক্যাম্পের এফ ব্লকের মো. ইলিয়াছ (৩১), মো. ইছহাক (৫৪) ও ক্যাম্প-৩-এর ই ব্লকের ফিরোজ খান (১৮)।
এ ঘটনায় আহতরা হলেন আব্দুল হক (৩২), আব্দুস শুক্কুর (৫৫) ও আব্দুল মোনাফ (৬০)। এরা সবাই এফ ব্লকের বাসিন্দা। বাকি ৩ জনের নাম জানা যায়নি। আহতরা কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এনজিও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক মো. ইকবাল এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশের দাবি, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার সদস্যরা এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। নিহত ও আহতরা আরএসও সদস্য।
সূত্র জানায়, ভোর পৌনে ৪টার দিকে রোহিঙ্গা মো. ইলিয়াছকে সন্ত্রাসী সংগঠন আরএসও সদস্যরা গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হাতে, পায়ে, তলপেটে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে চলে যায়। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে তার মৃত্যু হয়।
পরে ভোর সোয়া ৪টার দিকে আরেক সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আরএসও সমর্থক মো. ইছহাক, ফিরোজ খান, আব্দুল হক, আব্দুস শুক্কুর ও আব্দুল মোনাফকে শরীরের বিভিন্নস্থানে গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে।
ঘটনার পরে আহত রোহিঙ্গাদের চিকিৎসার জন্য উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মো. ইছহাক ও ফিরোজ খানকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ক্যাম্পের একটি সূত্র জানায়, রাত ৩টার দিকে ১২-১৪ জন সন্ত্রাসী (তারা আরসা সদস্য বলে চিহ্নিত) ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশনের এফ ব্লকের কাটাতারের বেড়া অতিক্রম করে পাহাড়ের দিক হতে ক্যাম্পের ভেতরে আসে। বিষয়টি জেনে ক্যাম্পে অবস্থান নেওয়া আরএসও সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে ক্যাম্পে পাহারারত রোহিঙ্গা ইলিয়াছকে আরসা সন্ত্রাসীদের সর্ম্পকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় তিনি তাদের কাছে আরসা সম্পর্কে সঠিক তথ্য না দেওয়ায় ক্ষেপে গিয়ে তাকে গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হাত-পায়ে ও তলপেটে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। ফলে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যায়।
এ ঘটনার খবর পেয়ে আরসা সদস্যরা পুনরায় ঘটনাস্থলে এসে আরএসও সদস্য ইছহাক, ফিরোজ খান, আব্দুল হক, আব্দুস শুক্কুর ও আব্দুল মোনাফদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্বক জখম করে। নিহত ইলিয়াছ আরসার সোর্স হিসাবে কাজ করতেন।
উখিয়া উপজেলার নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মূর্তিমান আতঙ্কের নাম আরসা’র সন্ত্রাসী গোষ্ঠি। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যা, অপহরণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, অগ্নিসংযোগ ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছে আরসা’র সন্ত্রাসী গোষ্ঠি। এরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাধারণ রোহিঙ্গাদের উপর প্রভাব খাটায়। কেউ আরসার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করলে অপহরণসহ নির্মম হত্যকাণ্ডের শিকার হতে হয়।
উখিয়া থানার ওসি শামীম হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিহতদের মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
মন্তব্য করুন