রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১
এস কে সাহেদ, লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৪, ০৬:১৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বুড়িমারী স্থলবন্দর

ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় চোরাচালান চক্র

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছে লালমনিরহাট সীমান্ত পথের চোরাচালান চক্র। ছবি : কালবেলা
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছে লালমনিরহাট সীমান্ত পথের চোরাচালান চক্র। ছবি : কালবেলা

আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছে লালমনিরহাট সীমান্ত পথের চোরাচালান চক্র। বুড়িমারী স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনে স্ক্যানার না থাকার সুযোগে কাগজ কলমে পাথর আমদানি দেখিয়ে ওই পাথরবোঝাই ট্রাকেই আনা হচ্ছে অবৈধ পণ্য।

এতে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, রপ্তানিকারক ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কাস্টমস কর্মকর্তাদের বদলি, জেল জরিমানা এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের লাইসেন্স বাতিল করেও চোরাচালান ও দুর্নীতির লাগাম টেনে থামানো যাচ্ছে না।

প্রতি বছর ঈদকে সামনে রেখে এক শ্রেণির অসাধু সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, রপ্তানিকারক স্থলবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভুটান ও ভারত থেকে পাথর আমদানির আড়ালে অবৈধ পণ্য আমদানি করে। তারা বিশেষ কায়দায় পাথরের ভেতরে উন্নত মানের ভারতীয় কাপড়, প্রসাধনী পণ্য ও কেমিক্যাল আমদানি করে। আর এসব পণ্য কাস্টমস কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে ওজনসহ বন্দরের যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ট্রাকের পাথর আউটপাস দিয়ে নিজ মাঠ থেকে আনলোড পয়েন্টের উদ্দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেয়। বুড়িমারী শুল্ক স্টেশনে স্ক্যানার না থাকার সুযোগে খুব সহজেই বন্দর পাড় হয়ে গন্তব্যে চলে যায় এসব পণ্য।

গত ২৮ মে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবি লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার বড়খাতা এলাকার বকুল মিয়া নামে এক ব্যবসায়ীর গোডাউন থেকে অবৈধ পথে আসা প্রায় ৬ লাখ টাকার একশ বস্তা ক্লে পাউডার, ২৩ বান্ডিল ভারতীয় কাপড়, ১০ কার্টুন সিটি গোল্ড এবং ৩০ কার্টুন সিরিজ কেনুলার উদ্ধার করে। এ সময় বিজিবি সদস্যরা পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকার তুহিনুজ্জামান বাবু ও মনোয়ার হোসেন নামে দুই চোরাচালানকারিকে আটক করে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব পণ্য কাস্টমস কর্মকর্তারা উৎকোচের বিনিময়ে ওজনসহ বন্দরের যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ট্রাকের পাথর আউটপাস দিয়ে বন্দর পাড় করে দেয়।

এদিকে গত বছরের ২৭ মার্চ কোরবানি ঈদের আগে পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে অবৈধ পথে আসা ৩টি ট্রাকভর্তি ভারতীয় পণ্য জব্দ করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ট্রাকের পাথরের ভেতর ছিল উন্নতমানের শাড়ি, থ্রিপিস, আন্ডার গার্মেন্ট ও চশমাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য। গভীর রাতে স্থলবন্দরের কলাবাগান ও বুড়িমারী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভুটান ও ভারত থেকে আমদানি করা পাথরবোঝাই ৩টি ট্রাক থেকে এসব পণ্য জব্দ করা হয়। এসব পণ্যের বাজার মূল্য ছিল ৩ কোটি ২৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এ সময় বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে ট্রাক ড্রাইভাররা পালিয়ে যায়।

এদিকে ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট বুড়িমারী স্থলবন্দরের অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় বন্দরে কর্মরত ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ১৬ জনকে অন্যত্র বদলি করা হয়। প্রমাণিত অনিয়ম ও দুর্নীতি হলো, বুড়িমারী স্থলবন্দরে ভারতীয় ট্রাক হতে ওজন স্টেশনে অবৈধভাবে টাকা আদায়, খাদ্যশস্যের ট্রাক হতে টাকা গ্রহণ, বিল শাখায় জালিয়াতি করে সরকারি রাজস্ব আত্মসাৎ, পণ্যবাহী গাড়ি ও ওজনের গাড়ির গরমিল, রাত্রিকালীন ট্রাক চার্জ জমা না দিয়ে আত্মসাৎ, ভুয়া চালান করা, ওজন স্কেলে পণ্যের ওজন কম দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এবারেও কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে বুড়িমারী স্থলবন্দরকেন্দ্রিক চোরাচালান চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা পাথরের ট্রাকে বিশেষ কায়দায় পাথরের ভেতরে লুকিয়ে অবৈধ ওইসব পণ্য পাচার করে দেশে আনছে। আর তাদের সহযোগিতা করছে অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তারা। প্রতিদিন প্রায় ৪০০-৫০০ গাড়িতে চলে আমদানি-রপ্তানির কাজ। ঋণপত্র (এলসি) অনুযায়ী এসব গাড়িতে আনা পণ্যের সঠিকতা যাচাই করা হয় অনুমানের ওপর ভিত্তি করে। গুরুত্বপূর্ণ এই শুল্ক স্টেশনে ‘পণ্য স্ক্যানার’ না থাকার সুযোগ নিয়ে পাথর ও অন্যান্য পণ্যের ভেতরে ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিস, কসমেটিকস, গয়না ও চিকিৎসার সামগ্রী চোরাচালান করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সহায়তায় এসব সামগ্রী পাচার করা হয়।

তবে কাস্টমস কর্মকর্তাদের অভিযোগ, একটি গাড়িতে ২০ থেকে ৬০ টন পর্যন্ত পাথর আমদানি করা হয়। বন্দরে স্ক্যানার নেই। পাথরবোঝাই সব গাড়ি সম্পূর্ণ খালি করে নিরীক্ষা করা কোনোভাবেই সম্ভব হয় না।

বুড়িমারী স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুজ্জামান সায়েদ বলেন, ‘অতি লাভের আশায় পাথর আমদানির নামে ভারত থেকে কাপড়, কেমিক্যাল, কসমেটিকসসহ বিভিন্ন ধরনের অবৈধ পণ্য নিয়ে আসছে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীরা।

বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশনের (কাস্টমস) সহকারী কমিশনার (এসি) নাজমুল হাসান জানান, ‘সন্দেহ হলে পাথর নামিয়ে ট্রাক খালি করে চেক করা হয়। এটি প্রতিদিনই করা হয়। সব ট্রাক তো এভাবে চেক করা সম্ভব নয়। কোনো আমদানিকারক বা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অবৈধ পণ্যসহ ধরা পড়লে কাস্টমস আইনে তাদের লাইসেন্স বাতিল করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, স্ক্যানার বসাতে রংপুর কমিশনারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। স্ক্যানার বসাতে পারলে অবৈধভাবে পণ্য আসা বন্ধ হবে বলেও জানান তিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

খুবিতে তৃতীয় নৈয়ায়িক ন্যাশনাল্সে চ্যাম্পিয়ন চবি

গণহত্যায় জড়িতদের বিচার দাবি সমমনা জোটের

সিলেট কারাগারেই চিকিৎসা চলছে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নানের

৬ কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ : মাহফুজ

রায় দিয়ে ‘বাবার ট্রাস্টে’ টাকা নেন বিচারপতি

‘সাংবাদিকরা সমাজে মেডিয়েটরের ভূমিকা পালন করে থাকেন’

দুর্গাপূজায় সনাতনীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে বিএনপি : মাহবুবের শামীম

নাসা স্পেস অ্যাপস প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন জবি

ষড়যন্ত্র বানচালে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : প্রিন্স

কার হাতে কত সোনার মজুত?

১০

পিএসসির চাকরির পরীক্ষা নিয়ে সমন্বয়ক সারজিসের স্ট্যাটাস

১১

যে কোনো সময় ইরানে হামলা চালাবে ইসরায়েল

১২

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঢাকার শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

১৩

লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন টুকু

১৪

কলেজ অধ্যক্ষকে বাঁচাতে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি

১৫

প্রতিটি শহীদ পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা দেওয়া উচিত : মেজর হাফিজ

১৬

সংসদের মেয়াদ ৪ বছর চায় গণঅধিকার পরিষদ

১৭

আন্দোলনে হামলাকারী হেলমেট বাহিনীর অন্যতম সদস্য মনিরুল গ্রেপ্তার

১৮

বিএনপি সম্প্রীতির রাজনীতি করে : আমিনুল হক

১৯

আ.লীগ শাসনামলেই হিন্দু সম্প্রদায় বেশি অত্যাচারিত হয়েছে : অ্যাডভোকেট সালাম

২০
X