মাছের রেণু পোনা নিয়ে এক সমৃদ্ধ ভান্ডার গড়ে উঠেছে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর বলুহর কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারিতে। গোটা দক্ষিণাঞ্চল ছাড়িয়ে বলুহর হ্যাচারির রেণু এখন যাচ্ছে ঢাকা, বরিশাল ও গাজীপুর জেলায়। বলুহর হ্যাচারির এই রেণু চাষ করে মৎস্যজীবীরা আশানুরুপ সাফল্য পাচ্ছেন।
বর্তমান এই হ্যাচারিতে চীন থেকে আমদানিকৃত সিলবার, বিগহেড ও গ্রাসকার্পের রেনু ও ভিয়েতনামীয় পাঙ্গাস, কালিবাউস এবং সুবর্ন রুই মাছ লালন পালন করা হচ্ছে। শুধু রেণু উৎপাদনই নয়, দেশের খ্যতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা রেণু পোনা উৎপাদনে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিতে এখানে আসছেন।
জানা গেছে, উন্নত জাতের কার্প জাতীয় মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করে আমিষের ঘাটতি পুরণের লক্ষে ১৯৮৪ সালে ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুরের বলুহর গ্রামে দেশের সর্ববৃহৎ মৎস্য হ্যাচারি কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১০৩ একর আয়তন বিশিষ্ট এই হ্যাচারিতে রয়েছে ৩০টি দৃষ্টিনন্দন পুকুর। ঝিনাইদহ ছাড়াও যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, রাজবাড়ি, মেহেরপুর ও সাতক্ষীরাসহ গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এই হ্যচারির উৎপাদিত রেণু পৌঁছে যাচ্ছে। হ্যাচারি ম্যানেজার মো. আশরাফ-উল-ইসলাম জানান, নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও হ্যাচারিতে রেণু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এ বছর রেণু বিক্রি করে ৩৫ লাখ ও টেবিল ফিশ এবং পোনা বিক্রির ১৭ লাখ টাকার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। যা এরইমধ্যে অর্জিত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি এখন রাষ্ট্রের লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
হ্যাচারি ম্যানেজার আরও জানান, পরিত্যক্ত ভবনগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে চালু করা হয়েছে। হ্যাচারির মধ্যে আবর্জনা স্তূপে ভরা ছিল। সেগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ফুল বাগান তৈরির মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে মজবুত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।
এদিকে হ্যাচারি প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বলুহর কেন্দ্রীয় হ্যাচারিতে দেশের খ্যতনামা ভার্সিটির শিক্ষার্থীরা আসছেন হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিতে। তাদেরকে আধুনিক কলাকৌশল ও সর্বশেষ লাগসই প্রযুক্তি শেখানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পুকুর থেকে ব্রুড সংগ্রহ পদ্ধতি, মাছে ইনজেকশন পুশ, ডিম সংগ্রহ ও বিপণন পদ্ধতি সম্পর্কে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে, যাতে তারা কর্মক্ষেত্রে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগাতে পারেন। কোটচাঁপুর উপজেলার জালালপুর গ্রামের মাছ চাষি জহুরুল ইসলাম জানান, বলুহর হ্যাচারির রেণু নিয়ে মাছ চাষ করে তিনি লাভবান হয়েছেন। তার মতো অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
মন্তব্য করুন