একাধিক মামলার আসামি ও আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কবির হোসেন সরকার। অভিযোগ আছে এককালে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে ভোল পাল্টে হয়ে যান যুবলীগ নেতা। তার আপন বড়ভাই গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি। তার পিতাও ছিলেন বিএনপি নেতা এবং জিয়াউর রহমানের জাগো দলের এমপি প্রার্থী। এসব নিয়ে খোদ দলের ভেতরেও কবির সরকারকে নিয়ে রয়েছে নানান সমালোচনা। অথচ এই বিতর্কিত নেতা ৭ বছর ধরে থানা যুবলীগের শীর্ষ পদে বহাল তবিয়তে আছেন। সম্প্রতি পেয়েছেন জেলা আহ্বায়ক কমিটির পদও।
কবির হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় আশুলিয়া থানায় একাধিক মামলাসহ ঢাকার রমনা থানায় রয়েছে একটি মামলা। ইতিমধ্যে রমনা থানার মামলায় সাজার রায়সহ তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
রমনা থানার মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ১৯ এপ্রিল জামায়াত-শিবিরের নেতাদের মুক্তির দাবিতে ঢাকার কাকরাইল এলাকায় স্লোগান দিয়ে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, যাত্রীদের মারধরসহ চালকের টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনায় রমনা মডেল থানায় একটি মামলা হয়। ২০১২ সালের ৪ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার তৎকালীন এসআই মো. জাফর আলী। আদালত ওই ঘটনায় বেশ কয়েকজন আসামির সঙ্গে কবির হোসেন সরকারকেও দোষী সাব্যস্ত করেন। আদালত কবির হোসেন সরকারকে ১৪৭ ধারায় এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের রায় দেন। রায়ের পর গত ৩ জানুয়ারি কবির হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
তবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর প্রকাশ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে কবির সরকারকে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কবির হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় আরও ৫টি মামলা রয়েছে। ২০১৮ সালের ২১ ডিসেম্বর, ২০১০ সালের ৩ এপ্রিল, ২০১৪ সালের ২৫ মে, ২০১৩ সালের ২০ জুলাই, ২০০৯ সালের ২১ জুলাই কবির হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে এসব মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, চুরি, প্রতারণা, দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়।
দিকে মামলা থেকে বাঁচতে যুবলীগে যোগ দিয়ে মো. কবির হোসেন সরকার আশুলিয়া থানা কমিটির শীর্ষ পদে স্থান পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর দেশের জাতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়, সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুসারে ঢাকার ২০টি সংসদীয় আসনের অনেকেই মামলা থেকে রেহাই পেতে, গ্রেপ্তার বা আটক হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে ওই সময়ে আ.লীগে যোগ দেন। অন্যান্যদের অনেকের নামের সঙ্গে আশুলিয়ার কবির হোসেন সরকারের নাম রয়েছে।
আশুলিয়া যুবলীগের একাধিক নেতাকর্মী দাবি করে বলেন, কবির সরকারকে আগে ছাত্রলীগ বা যুবলীগের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং তার আপন বড়ভাই শাখাওয়াত হোসেন সরকার গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি। তার বাবা মরহুম গিয়াস উদ্দিন সরকারও বিএনপির বড় নেতা ছিলেন এবং জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত জাগো দল থেকে ঢাকা-১২ আসনে সংসদ নির্বাচন করেন। কবির সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে। আর এসব মামলা থেকে বাঁচতেই তিনি যুবলীগের রাজনীতি শুরু করেন। ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই গঠিত আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে তৎকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে সুসম্পর্কের মধ্য দিয়ে আহ্বায়কের পদ পান তিনি। তিন মাস মেয়াদি সেই কমিটি বর্তমানে ৭ বছরে পড়েছে কিন্তু এখনও সেই কমিটির আহ্বায়ক পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি। পাশাপাশি গত ১৭ ফেব্রুয়ারি গঠিত ঢাকা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে পেয়েছেন সদস্য পদ।
এসব বিষয়ে জানতে কবির হোসেন সরকারকে গতকাল এবং আজ শুক্রবার (৭ জুন) একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়টি জানতে চাইলে এর সত্যতা নিশ্চিত করে আশুলিয়া থানার ওসি এ এফ এম সায়েদ বলেন, কবির হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেয়েছি। তাকে ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে এ বিষয়টি নিয়ে ঢাকা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানিয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
মন্তব্য করুন