মানুষ গড়ার কারিগর একজন স্কুল শিক্ষক। সেই শিক্ষক যদি হয় জালিয়াত তবে তার কাছে কী শিখবে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। বলছি ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার সোনাতনপুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের সহকারী শিক্ষক মো. মোকাদ্দেস হোসেনের কথা। তিনি উপজেলার ফলসী গ্রামের চাঁদ আলীর ২য় স্ত্রীর প্রথম সন্তান। উপজেলার ফলসী গ্রামের মৌজায় ছোট দুই ভাইয়ের ১৮ শতাংশ জমি জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মাসাতের অভিযোগে কারাভোগ করেছেন। এমনকি সম্পত্তি দখল করতে এর আগে ভাইদের বিরুদ্ধে নিজের স্ত্রীকে দিয়ে করেছেন শ্লীলতাহানির মামলা।
জানা যায়, হরিণাকুন্ডু উপজেলার ফলসী ইউনিয়নের ফলসী গ্রামের চাঁদ আলীর দুই স্ত্রীর ৫ ছেলে ও ৭ মেয়ে। ছোট স্ত্রীর তিন ছেলের মধ্যে বড় মোকাদ্দেস হোসেন। তিনি উপজেলার সোনাতনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন ২০১২ সালে। তার নিজ মায়ের অন্য দুই ভাই মিরাজ হোসেন ও রাসেদুল ইসলাম। বে মাতা দুই বড় ভাই মোশাররফ হোসেন ও আব্দুল কুদ্দুস।
তাদের বাবা মৃত চাঁদআলী ফলসী ইউনিয়নের ফলসি গ্রামের মৃত জয়নুদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে। পিতা চাঁদআলী ২০০০ সালে ৪৬ নং ফলসী মৌজায় ৬৫ শতাংশ জমি ক্রয় করে। পরে দানপত্র করে দেয় তার মেজো ছেলে মিরাজ ও ছোট ছেলে রাসেদুলকে। যার দলিল নং ১৩৫২/২০০০।
এই অবস্থায় মিরাজ ও রাসেদুলের বড় ভাই শিক্ষক মো. মোকাদ্দেস হোসেন জাল দলিলের মাধ্যমে ১৮ শতক জমি নিজের নামে করে নেন। বিষয়টি জানাজানি হলে তার ছোট ভাই মিরাজ হোসেন বাদি হয়ে আদালতে তার নামে জালিয়াতির মামলা করেন। এ ছাড়াও হরিনাকুন্ডু সাবরেজিস্টার অফিসের মোহরার শামছুল আলম বাদী হয়ে আরও একটি মামলা করেন। আদালত জালিয়াতির প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণ হওয়ায় আসামি মোকাদ্দেসকে গত ২১ এপ্রিল আদালত জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এরপর তিনি এক মাস ৭ দিন পর গত ২৮ মে জামিনে বের হন।
অভিযোগ রয়েছে শিক্ষক মোকাদ্দেস এতটাই লোভী ও ভূমি দস্যু যে তার স্ত্রী মুসলিমাকে বাদী করে নিজ ও বে-মাতা ৪ ভাইয়ের বিরুদ্ধে আদালতে শ্লীলতাহানির মামলা দায়ের করেন। সেই মামলা আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এ দিকে শিক্ষক মোকাদ্দেসের জালিয়াতির ঘটনা ও হাজতবাসের কথা জেনে স্কুল কতৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন। কিন্তু জেল থেকে বেরিয়ে তিনি বহিষ্কারাদেশ অমান্য করে পুর্বের মত স্কুলের কার্যক্রম করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া তিনি জাল সনদে শিক্ষকতা পেশায় এসেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যেটি তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে বলে এাকাবাসী দাবী করেন।
সোনাতনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাবুদ্দিন জানান, তার ব্যাপারে আমরা স্কুল ম্যানিজিং কমিটির সভাপতিসহ সকলে আলোচনায় বসবো। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, তার বিরুদ্ধে চলতি বছরে আদালতে মামলা হয়। জেল হাজতে থাকায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। সে তার বিরুদ্ধে আনা সাময়িক বরখাস্তর বিষয়টি উঠিয়ে নেওয়ার জন্য দেন দরবার করছে বলেও স্কুল কমিটির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান। তিনি বলেন পরিচালনা কমিটি সভা করে তার বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করবে।
এদিকে ভুক্তভোগি মিরাজ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, তার ভাই মোকাদ্দেস হোসেন তাদের জমি দখলের হীন উদ্দেশ্যে জাল দলিল করে। পরে তারা আদালতের মামলা করলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এছাড়াও তিনিসহ তার ছোট বড় ভাইদের বিরুদ্ধে তার ভাবির করা মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হন। পরবর্তীতে ওই মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় তারা সকলে খালাস পান।
হরিণাকুন্ডু মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল বারী জানান, তাকে আদালত সাজা না দেওয়া পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না। তবে তিনি আবেদন করলে সাময়িক বরখাস্ত প্রত্যাহার করা হবে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক মোকাদ্দেস হোসেনের মুঠো ফোনে বার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
মন্তব্য করুন