যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সালেহা বেগম নামে এক বৃদ্ধার শরীরে তিন ব্যাগ ‘বি’ পজিটিভ রক্ত দেওয়ার পর পরবর্তীতে জানা যায় রোগীর রক্তের গ্রুপ ‘এ’ পজিটিভ। চিকিৎসক বলছেন, এ ঘটনায় রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন।
ঘটনাটি গত ২০ মে ঘটলেও মঙ্গলবার (৪ জুন) সকালে নতুন করে রক্ত দিতে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। এ ঘটনায় রোগীর স্বজনরা মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুণ অর রশিদের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়েছেন।
রোগীর মেয়ে শিরিনা আক্তার কালবেলাকে বলেন, গত ২০ মে আমার মা সালেহা বেগমকে অসুস্থ অবস্থায় যশোর জেনারেল হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এ সময় চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রক্তশূন্যতার কারণে তাকে রক্ত দিতে বলেন। পরে ওয়ার্ডের নার্সরা রোগীর শরীর থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে ক্রসম্যাসিং করার জন্য হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে পাঠান। সেখানে কর্মরত জালাল উদ্দিন ক্রোসমেচিং করে ‘বি’ পজেটিভ ফলাফল প্রদান করেন। পরে আমার মায়ের শরীরে পরপর তিন দিন তিন ব্যাগ ‘বি’ পজিটিভ রক্ত দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, পরে মায়ের শরীরের জ্বালা-যন্ত্রণা শুরু হলে চিকিৎসকরা ঢাকায় রেফার্ড করেন। আমরা মাকে বাড়িতে নিয়ে যাই। বাড়িতে যাওয়ার পরে অবস্থার অবনতি হলে আবারও যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি। এবারও চিকিৎসরা রক্ত দিতে আমাদের বলেন। তখন রক্ত নতুন করে ক্রসম্যাসিং করতে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে নিয়ে যাই। কিন্তু এবার প্রতিবেদনে ‘এ’ পজেটিভ আসে।
রোগীর মেয়ে আরও বলেন, বিষয়টি আমাদের সন্দেহ হলে ডা. গৌতম কুমারকে দেখাই। তিনি বেসরকারি ক্লিনিক থেকে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করতে বলেন। তখন আমরা শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা করলে রক্তের গ্রুপ ‘এ’ পজেটিভ আসে। তখন চিকিৎসক আমাদের জানান, রোগীর শরীরের ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়া হয়েছে, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, বহিরাগতদের দিয়ে কাজ করানোর ফলে বর্তমানে ব্লাড ব্যাংকে এ ধরনের ভুল হচ্ছে।
ওয়ার্ডের এক নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্লাড ব্যাংক থেকে পাওয়া প্রতিবেদন ও রক্তের ব্যাগের গায়ে লেখা প্রতিবেদন দেখে রোগীর শরীরে রক্ত দেওয়া হয়। এখানে আমাদের কোনো ভুল নেই।
ওয়ার্ডে দায়িত্বরত এক চিকিৎসক জানান, ভুল রক্ত দেওয়ার কারণে রোগীর কিডনি, মাথার বাম সাইডে রক্তক্ষরণসহ শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে।
রোগীর স্বজনদের দাবি, ব্লাড ব্যাংকের সংশ্লিষ্টদের কর্তব্যে অবহেলার কারণে রোগী মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
হাসপাতালের ব্লাড ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক ডা. সেলিম রেজা বলেন, ব্লাড ব্যাংকে এ ধরনের ভুল মেনে নেওয়া যায় না। তবে ভুল কোথায় হয়েছে সে বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুস সামাদ বলেন, সালেহা বেগমের শরীরের ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে।
জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হারুণ অর রশিদ কালবেলাকে বলেন, রোগীর স্বজনরা মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে এমন ভুল আগে কখনো হয়নি। এ প্রথম ঘটনা ঘটেছে। তারপরও আগামীতে যেন এ ধরনের ভুল না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।